লেকপার্কে শীতের এক
সকাল
নূরহাসনা লতিফ
উত্তরা
১৩ নম্বর লেক পার্ক একটা প্রিয় জায়গা
আমাদের । ভোরে নামাজ কালামের পর আমাদের প্রথম চিন্তা পার্কে যাওয়া। মানে আমাদের
হাঁটতে হবে। আর সে হাটা হবে পার্কের সুন্দর রাস্তা দিয়ে। উত্তরাতে হাঁ টার
জন্য অনেক রাস্তা ইচ্ছে করলেই যে কোন রাস্তা দিয়ে হাঁটা যায় তবে হাটার জন্য ১৩
নম্বর লেক পার্ক বেশি ভাল। আমাদের সবার পছন্দ। গাছ গাছালিতে ভরা মনোরম জায়গা। সুন্দর
পাকা রাস্তা চলে গেছে একেবেকে। এখন বেশ শীত পড়েছে। সকাল বেলা একগাদা কাপড় পরে বের
হতে হয়। এখানে আমাদের আর একটা আকর্ষন আছে সে হচ্ছে ব্যায়াম করা। হাঁটার পর স্বাস্থ্য
ঠিক রাখার জন্য আমরা ব্যায়াম করি।
পার্কের ভেতরে একটা পাকা জায়গা আছে সেখানে আমরা ব্যায়াম করি। ব্যায়ামের সময় জায়গাটা কাপড়
দিয়ে ঘিরে দেয়া হয়।হাঁটি । ব্যায়াম করি। বেঞ্চে
বসে গল্প করি। এরপর আমাদের চিন্তা নূতন কিকরা যায়। আমাদের সবচেয়ে বয়সে বড়
বুলবুলি আপার মাথা থেকেই নূতন সব চিন্তা বের হয় আর আমরা সেটা কার্যে পরিনত করার
জন্য লেগে পড়ি। কদিন আগে ব্যায়ামের পাচ বর্ষ পূর্তি অনুষ্ঠান করা হোল। এর মধ্যে আপা বললে না আমরা আরেকটা মজা
করি আমরা জানতে চাই মজাটা কিরকম? আপা বলেন গ্রামের লোকেরা যেমন আগুন জালিয়ে শীত নিবারণ করে আমরাও এখানে একদিন
আগুন জ্বালিয়ে প্রতীক পালন করবো মানুষকে বোঝাতে হবে এ্টা এক রকম কালচার। সবাই রাজি হোল। বাগানের শুকনো পাতা সব জড়ো করা হোল। আপা বললেন উৎসব শুধু শুধু হয় না। শীতের খাবার
চাই। আগুনের সাথে পিঠা পায়েস চাই। আমার তখন
মনে পড়ছে গ্রামের কথা। শীতের সময় গ্রামে গিয়ে কত না
মজা করেছি। সকালের দেয়া আগুনে
পিঠে পুড়ে খেয়েছি। মিষ্টি আলু খেয়েছি পুড়ে।
শীতের সকালটা ছিল বড় উপাদেয়। সেই সময়
গ্রামে শীতের কাপড়ের অভাব ছিল। দামী ও লের কাপড় পরতে পারতো না মানুষ। খাদি ফ্ল্যালেন
কাপড় দিয়ে কোন কম শীত নিবারণ করতো আর তাই সকালবেলা পাতা জড়ো করে আগুন জালিয়ে উম
নিত। এখন অবশ্য গার্মেণ্টস এর কল্যাণে গরম জামা কাপড় প্রায় সবাই পায়। সে সময় রাতের
বেলা ঘরে জ্বালান হোত গাছের গূড়ি বা বড় কাঠের খণ্ড আস্তে আস্তে এ আগুন জ্বলতো
অনেকটা বিদেশি ফায়ার প্লেসের আগুনের মত। বড় ছোট সবাই মিলে বসে আগুন পোহাতো আর গল্প
গুজব করতো। ঘুমানোর সময় নিভিয়ে দিত কাঠটা। পরদিন যথারীতি সবাই এলো
হাটতে। এক রাউণ্ড হাঁটার পর এলো সবাই ব্যায়মের
জায়গায়। সেখানে স্তুপ করে রাখা ছিল পাতা। শূধু দেশলাই ঠূকবার
অপেক্ষায়।
সুকান্তের “হে সূর্য” কবিতা্টা
একজন পড়লে। বুলবুলি আপা রবীন্দ্রনাথের সামান্য ক্ষতি নৃত্য নাট্যের কিছু অংশ পাঠ করলেন। আগুন জ্বালো গান পরবেশন করে হুদা ভাই মনি,বকুল
ও অন্যদের
নিয়ে। একদিকে আগুন জ্বলছে অন্যদিকে আগুন ঘিরে অনুষ্ঠান।আগুনের উম নিচ্ছে সবাই। আর
ফটোসেশন চলছেই। দারুণ পরিস্থিতি। সবাই বললে
এমন মজা অনেক দিন হয় না। আস্তে আস্তে
একসময় আগুনটা নিস্তেজ হয়ে এল। এবারে আমাদের আয়োজিত শীতের খাবারের পালা। আগুন নিয়ে ব্যস্ত ছিল সবাই । ওদিকে আর একটা বিস্ময় ছিল আমাদের
জন্য।
হাটা পার্টি ভাল আয়োজন
করেছে। বাগানের এক কোনায় চারজন মহিলা বসে
বানাচ্ছে চিতই পিঠা। খুশিতে সবার মন নেচে ওঠে শীতের ভোরে পিঠে খেতে কার না ভালো
লাগে। পিঠে তো শধু খাচ্ছি না এর সাথে আছে গরুর মাংস। তাও আবার রান্না করে এনেছে বেবী।
আলু দিয়ে মাংসের ঝোল কিযে উপাদেয় বোঝাতে পারব না সঙ্গে সালাদ । কাচা পেয়াজ টু করো ও কাচা
মরিচ। মনে মনে ভাবলাম আগুনের জন্য এত
ভাল খাবার। পাশের এক বান্ধবী বললে
আরও একটা ভাল খাবার আছে। পিঠে শেষে সে পরিবেশণ করা হল। সে
হচ্ছে বুলবুলি আপার বিখ্যাত পায়েসা আপা এ
পায়েস আমাদের আগেও খাইয়েছেন। একবার খেলে বোঝা যাবে কি খেলাম। পায়েস খেয়ে দেখতে আসে
মানুষ বুলবুলি আপাকে। খুব তৃপ্তিকরে
পায়েসও খেলাম। বেবীকে বললাম তোমার মাংস রান্না দারুন
হয়েছে। বেবী বললে আপা ১০০তে ১০০ পাব। হেসে বললাম
তা পাবে।
শিীতের এই সকাল টা আনন্দে ভরে গেল। আসলে ইচ্ছে
করলেই এমন আনন্দ সবাই করতে পারে। শুধু একটু আগুনের অছিলায় শীতের সকালটাউপাদেয় হয়ে গেল। পেছনে চলে গেলাম এমন আগুনের উম
কত না নিয়েছি কিন্তু বুঝতে পারিনি এর মুল্যবোধ। উত্তরঞ্চলে যখন খুব শীত পড়ে তখন
আগুনই শীত নিবারণের একটা উপায়। নূতন করে উপলব্ধিতে এলো।
No comments:
Post a Comment