আহমেদ দিদাত: যাকে দেখে অনুপ্রাণিত ডা. জাকির নায়েক!!
আহমেদ দিদাতের (রাহিমাহুল্লাহ) প্রাতিষ্ঠানিক পড়ালেখা ছিলো ক্লাস সিক্স পর্যন্ত। ভারতে জন্মগ্রহণ করলেও জীবিকার তাগিদে পরিবারের সাথে দক্ষিণ আফ্রিকায় যান। একটা ফার্নিচারের দোকানে কিছুদিন কাজ করেন।
তিনি লক্ষ্য করলেন, দক্ষিণ আফ্রিকায় খ্রিস্টান মিশনারী খুব সক্রিয়। তারা সেখানকার মুসলমানদেরকে এসে ইসলাম সম্পর্কে উল্টাপাল্টা প্রশ্ন করছে, অনেকেই তার উত্তর দিতে পারছে না। শেষমেশ মিশনারীর প্ররোচনায় পড়ে মুসলিমরা খ্রিস্টান হয়ে যাচ্ছে।
চোখের সামনে মুসলিমদের খ্রিস্টান হতে দেখার এই দৃশ্যটা আহমেদ দিদাত মেনে নিতে পারলেন না। তিনিই বা কী করবেন? ইসলামকে ডিফেন্ড করার জন্য তাঁর নিজেরও তো পড়াশোনা তেমন নাই।
'যে নিষ্ঠার সাথে চায়, আল্লাহ তাকে পথ দেখান।' আহমেদ দিদাতের বেলায়ও এমনটা ঘটেছিলো। একদিন তিনি 'ইযহারুল হক' নামের বইটা পেয়ে যান। এটা সেই বই, যে বইয়ে খ্রিস্টানদের বই (বাইবেল) থেকে খ্রিস্টধর্মের ভ্রান্তি তুলে ধরা হয়েছে। আহমেদ দিদাত যেসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজছিলেন, অনেকগুলো পেয়ে যান এই বইয়ে।
যে সমুদ্রের নোনা পানি সামান্য খেয়েছি, তার কি অল্পে তৃষ্ণা মিটবে? দিদাত শুরু করলেন ইসলাম ধর্ম, ক্রিস্টিয়ানিটি নিয়ে গভীর পড়াশোনা। শিক্ষক হিশেবে পেলেন নও-মুসলিম Mr. Fairfax কে। ফেয়ারফ্যাক্স তাঁকে বাইবেল শেখান, কিভাবে দাওয়াত দিতে হয়, ডিবেট করতে হয় সেই কৌশল শেখান।
পড়াশোনার পাশাপাশি আহমেদ দিদাত আশেপাশের খ্রিস্টান মিশনারীর সাথে ডিবেট করতেন, মুসলিমদের মাঝে ভ্রান্তির নিরসন করতেন। তুলনামূলক ধর্মতত্ত্ব নিয়ে গবেষণা করলেন চল্লিশ বছর। মাত্র ক্লাস সিক্স পাস আহমেদ দিদাত, চল্লিশটি বছর কাটালেন কুরআন-হাদীস আর বাইবেলসহ অন্যান্য ধর্মগ্রন্থের গবেষণায়।
...
নয় বছর বয়সে আহমেদ দিদাত খ্রিস্টান মিশনারীদের দাওয়াত দেখে কষ্ট পেয়েছিলেন, সেই তিনি চল্লিশ বছর গবেষণার পর সিদ্ধান্ত নিলেন- আমি এখন খ্রিস্টানদের সকল অপপ্রচারের জবাব দেবো। কার সাথে এখন ডিবেট করবেন?
আহমেদ দিদাত হিশেব কষলেন। তাঁর সময়ে বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী খ্রিস্টান পণ্ডিত, বিতার্কিক ছিলেন অ্যামেরিকার জিমি সোয়াগাট। একটা টিভি অনুষ্ঠানে জিমি সোয়াগাটকে নিতে মিলিয়ন ডলার বাজেট লাগে, খ্রিস্ট সমাজে এত্তো বড়ো একজন সেলিব্রিটি ছিলেন জিমি সোয়াগাট।
আহমেদ দিদাত ঠিক করলেন, "আমি জিমি সোয়াগাটের সাথেই ডিবেট করবো।" তাঁর এমন আত্মবিশ্বাস দেখে একজন ভক্ত বললো, "দেখুন, আপনি আগুন নিয়ে খেলবেন না। জিমি সোয়াগাটকে আমি চিনি। সে এত্তো বড়ো মাপের ডিবেটার, আপনাকে চিবিয়ে খেয়ে ফেলবে। তার সাথে ডিবেট করে ইসলামের অপমান করবেন না, প্লিজ।"
ভক্তের সতর্কবার্তা শুনে আহমেদ দিদাতের আত্মবিশ্বাস না কমে বরং বেড়ে গেলো। শিকার যখন করবেন, আহমেদ দিদাত ভাবলেন- চুনোপুঁটি শিকার করবো না, রুই-কাতলা শিকার করবো।
১৯৮৪ সাল৷ আহমেদ দিদাত জিমি সোয়াগাটের হোমকাউন্ট্রি অ্যামেরিকায় গেলেন তার সাথে ডিবেট করতে। ডিবেটের টাইটেল ছিলো: Is the Bible God's Word?
ক্রুসেড পরবর্তী খ্রিস্টানদের বিরুদ্ধে মুসলমানদের যতোগুলো বড়ো বুদ্ধিবৃত্তিক বিজয় অর্জিত হয়েছিলো, জিমি সোয়াগাটের সাথে আহমেদ দিদাতের বিজয় ছিলো তারমধ্যে অন্যতম। তৎকালীন সময়ের খ্রিস্টানদের সবচেয়ে বড়ো বিতার্কিককে পরাজিত করে আহমেদ দিদাত বিশ্বের ধর্মতাত্ত্বিকদেরকে চমকে দেন।
আল্লাহ যাকে সম্মানিত করতে চান, মানুষের কাছে তার প্রতি ভালোবাসা সৃষ্টি করেন। দুনিয়াতে দাওয়াতী কাজের স্বীকৃতি পেতে বেশিদিন অপেক্ষা করতে হয়নি।
আহমেদ দিদাত ১৯৮৬ সালে মুসলিম বিশ্বের 'নোবেল' হিশেবে পরিচিত, মুসলিম বিশ্বের সবচেয়ে বড়ো এওয়ার্ড 'কিং ফয়সাল এওয়ার্ড' লাভ করেন।
...
মোমবাতি শুধু একাই জ্বলে না, অন্যকেও জ্বালায়। আহমেদ দিদাত ছিলেন তেমন একজন মোমবাতি। তাঁর দ্বারা অনুপ্রাণিত হোন বর্তমান মুসলিম বিশ্বের অন্যতম দা'ঈ ডাক্তার জাকির নায়েক (হাফিজাহুল্লাহ)।
জাকির নায়েক একটা লেকচারে আহমাদ দিদাত সম্পর্কে বলেন: "The person who changed my life, converted me from a doctor of body to doctor of soul."
অর্থাৎ, সেই মানুষটি আমাকে বদলে দিয়েছেন; আমাকে শরীরের ডাক্তার থেকে আত্মার, হৃদয়ের ডাক্তার বানিয়েছেন।
...
আহমেদ দিদাত বিশ্বের বাঘা-বাঘা বিতার্কিকের সাথে বিতর্ক করেন, তুলনামূলক ধর্মতত্ত্বের কয়েকটি বই লিখেন। তাঁর ডিবেটগুলো ইউটিউবে আছে, বইগুলো অনলাইনে আছে। তাঁর সবচেয়ে বিখ্যাত বই 'The Choice' বইটি বাংলাদেশের ইসলামিক ফাউন্ডেশন থেকে অনূদিত।
...
২০০৫ সালের ৮ আগস্ট তিনি ইন্তেকাল করেন। তাঁর জানাজা পড়ান বর্তমান বিশ্বের সুপরিচিত স্কলার মুফতি ইসমাইল মেনক।
আল্লাহ তার ভুল ত্রুটি ক্ষমা করে তাঁকে জান্নাত বাসী করুন।
সংগৃহীত।
No comments:
Post a Comment