ভালোবাসার কান্না
মাওলানা ইব্রাহিম খাঁর পরিজনরা যখন বিষয়টা জানলো যে, ছেলে ঢাবির রসায়নের শিক্ষক| একাত্তরের স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদ পুলিশ অফিসার ফয়জুর রহমানের ছেলে| তখন আর রাজি না হয়ে পারলো না| দুই পরিবারের সম্মতিতেই বিয়ে হয়ে গেলো| অনেকটা সাদামাটাভাবেই| কারণ, যুদ্ধ পরবর্তী সময় তো, ১৯৭৩ সাল| সকলের অবস্থাই ছিলো অনেকটা নাজুক|
হুমায়ূন আহমেদ তো লেখক মানুষ| গুলতেকিনকে কাছে পেয়ে বিনা চেষ্টায় তাঁর কলমের ডগায় যেনো নেমে এলো আশ্চর্য আলাদীন| লেখা তো আর লেখা নয়, এ যেনো রতœ ভাণ্ডার| দুজনের কী যে ভালোবাসাবাসি, কী যে সুখ, কী যে আহলাদ| কলমের নিপ বেয়ে নেমে এলো লেখা আর লেখা| খুব কম সময়েই তিনি দখল করে নিলো কোটি কোটি পাঠক হৃদয়| একদিন প্রশ্ন করা হলো, এতো দুর্লভ লেখা লিখেন কী করে? তিনি উত্তর দিলেন, হাতের কাছে শ্রেষ্ঠ একজন নারী আছে বলেই! গুলতেকিনকে তিনি এতোটাই ভালোবাসতেন|
তিন দশক পর একটা অচেনা জ্বরে আক্রানত&ধসঢ়;দ হলেন হুমায়ূন| এতো বুদ্ধিমান, বিচক্ষণ মানুষটি মুহূর্তে খেই হারিয়ে ফেললেন| হারালেন গুলতেকিনের মতো একজন শ্রেষ্ঠ নারীকে| আদরের ছেলেমেয়ে| ভুল ভাঙ্গলো কিছুদিন পরেই| কিন্তু তখন যে কিছুই করার ছিলো না| তিনি তো সাধারণ কেউ না যে মুখ ফুটে বলবেন, ’গুলতেকিন, আমার চরম ভুল হয়ে গেছে, ক্ষমা করে দাও|’
ভুল চিকিৎসায় ১৯ জুলাই ২০১২ তারিখে মারা গেলেন হুমায়ূন আহমেদ| গুলতেকিন কেঁদেছে অনেক| ভালোবাসার মানুষকে অন্য একজন এসে বুক থেকে কেড়ে নিয়ে গেলো, কার কান্না না আসে? আর সে যদি হয় মেয়ের বয়সী তখন? আর গুলতেকিন তো সাধারণ কেউ নয়| সে তো শ্রেষ্ঠ নারী| শ্রেষ্ঠ নারীদের প্রকাশ্যে কাঁদতে নেই| তাতে শ্রেষ্ঠত্ব নষ্ট হয়| শুধু নীরবে গুমড়ে চোখের জলে ভেসেছেন| কাউকে বুঝতে দেননি| গুলতেকিন ভালো করেই জানতেন, বুঝতে পারলে আর রক্ষা নেই| সব বাধা ডিঙ্গিয়ে হুমায়ূন তার কাছে ছুটে আসবেই| তিনি হুমায়ূনকে যে ভালোবাসেন| ভালোবাসার মানুষ তাকে অনেক কষ্ট দিয়েছে ঠিকই| তাই বলে তো তিনি ভালোবাসার মানুষকে ছোট হতে দিতে পারেন না| প্রকৃত ভালোবাসায় কখনো জিদ থাকে না|
No comments:
Post a Comment