ইসলামে তাবিজ ব্যবহার নিষিদ্ধ কেন?
মোঃজুবায়ের সিকদার
আপনার হয়তো অনেকেই আববার এবং সাইফি সাহেবের তাবিজ সংক্রান্ত ডিবেটটি দেখেছেন।
প্রথমে আমি বলে নেই, বাংলাদেশের মানুষ তাবিজ বলতে কি বুঝে? ৯৯% তাবিজ ব্যবহারকারীরা মনে করেন তাবিজ তাদের রক্ষা করবে বা তাবিজের ওসিলায় রক্ষা করবে অথবা বিপদ দূর করবে,,আর এটাকেই জাহিলি যুগে তামিমা বলা হতো,, অর্থাৎ, সেই তামিমাকে বর্তমানে তাবিজ নাম দিয়ে ব্যবহার হচ্ছে।তাই অনেক মুহাদ্দিস তাবিজ এবং তামিমাকে উদ্দেশ্যগত দিক দিয়ে একই বলেছেন।
আমি কোন দলীল দিবো না কারণ উক্ত ডিবেটে দুইজনেই দলীল দিয়ে কথা বলেছেন,,
ডিবেটের প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত ভাই আবরার একটি হাদীসকে সামনে রেখে পুরো আলোচনা করেছেন, হাদীসটি আব্দুল্লা ইবনে আমর রাঃ থেকে বর্ণিত, এই হাদীসে একজন রাবী মোহাম্মদ ইবনে ইসহাক, এই রাবীকে ৯০ % মুহাদ্দিসগন মুদাল্লিস বলে থাকে। যাইহোক আবরার সাহেব তাবিজকে জায়েজ করার জন্য অনেক সময় দরে এই একটা হাদীসকে "হাসান"প্রমাণ করার চেস্টা করেছেন,,অথচ তারমত করে (মুহাদ্দিসীনদের তাহকীক)১০০ টার বেসি দলীল দিয়ে উক্ত হাদীসকে যঈফ প্রমাণ করা যাবে।
তিনি বলতে চাচ্ছেন হাদীসটি হাসান লিগাইরিহী ( সহীহর সর্ব নিম্মস্তর)।
এখানে জানতে হবে, হাসান লিগাইরিহীর হাদীসগুলো এককভাবে সহীহ নয়,, একটি বিষয়ে বেস কিছু যঈফ(দূর্বল) হাদীস বিভিন্ন সনদ থেকে আসলে সেটা হাসান লিগাইরিহীর পর্যায়ে চলে যায়।
আলহামদুলিল্লাহ, সাইফী সাহেব উক্ত রাবীকে কেন্দ্র করে উক্ত হাদীসটিকে যঈফ প্রমাণ করেছেন, যদিও আবরার সাহেব সেটা মেনে নেননি।
আচ্ছা যদি ধরেও নেই এই হাদীটি হাসান সহীহ।তার পরেও তাবিজ শির্ক হওয়ার জন্য কয়েকটি পয়েন্ট নিচে উল্লেখ করছি,
১.উক্ত হাদীসটির পুরো বিশ্লেষণ মুসনাদে আহমদে করা হয়েছে, যেখানে তাবিজ ঝুলানো স্পষ্ট নিষেধ এসেছে।
২.উক্ত হাদীসে তাবিজ দেওয়ার উদ্দেশ্য হলো কোরআন শিখানো।
৩.উক্ত হাদীসে, তাবিজটি কোন সাহায্য বা বিপদমু্ক্তির জন্য দেওয়া হয় নি।
৪.হাদীসটি একক ভাবে এসেছে (সাহাবীদের ঐক্যমতে আসে নাই)
৫.এই হাদীসের বিপক্ষে একাধিক রসূল সাঃ এর স্পষ্ট সহীহ হাদীস রয়েছে।
হয়তো অনেকেই বলবেন তাহলে ২৫ জনেরো বেসি মুহাদ্দিস এই হাদীসটাকে হাসান সহীহ বললো কেন।
আমি বলতে চাই, যে মুহাদ্দিসগন হাদীসটাকে হাসান সহীহ বলেছেন, তারা যদি জানতো কিছু আলেম এই হাদীসটাকে পুজী করে তাবিজ হিসাবে ব্যাবহার করবে তাহলে সকল মুহাদ্দিসগন উক্ত হাদীসটিকে যঈফ নয় জাল বলে দিতো ( আল্লহ, ভুল ক্ষমা করুন)
উক্ত হাদীস নিয়ে তাদের উদ্দেশ্য আর আমাদের উদ্দেশ্যে আকাশ পাতাল ব্যবধান,, আর এই উদ্দেশ্যটাকেই শির্ক বলা হয়। তাছাড়া ২৫ জন কেন ২৫ হাজার মুহাদ্দিসিনদের মত যদি রসূল সাঃ এর আমলের বিপক্ষে যায় তাহলেও আমরা সে কথা দেওয়ালে ছুড়ে মারবো।
আলহামদুলিল্লা, আবরার সাহেব যদিও তাবিজ জায়েজ বলেছেন, আবার এর জন্য শর্তও দিয়েছেন,,যেই শর্ত অনুযায়ী তাবিজ ব্যাবহারকারীর প্রায় ৯৯% মুশরিক।এটা সাইফি সাহেব বই দেখিয়ে দেখিয়ে প্রমাণ করেছেন,, আর আবরার সাহেব শেষ পর্যন্ত মেনেও নিয়েছেন,,আর তার মেনে নেওয়া মানে আশরাফ আলী থানবী রহঃ সহ চরমোনাই এরা মুশরিক!!!
এখন মূল কথা বলি, নিঃসন্দেহে আমাদের জন্য উত্তম আদর্শ রসূল সাঃ।
আর যদি সাহাবিদের কোন আমল রসূল সাঃ এর বিপক্ষে না যায়, তাহলে সেটা মেনে নিতে আমাদের কোন আপত্তি নেই।
কিন্তু আমরা কখনো সাহাবী রাঃ এর আমল দিয়ে রসূল সাঃ এর আমলকে বাদ দিতে পারবো না, সেটা হযরত ওমর রাঃ আমল হলেও।
আমি পূর্বেই বলেছি রসূল সাঃ এর সময়ে তামিমা আর বর্তমানের তাবিজে কোন পার্থক্য নেই।
একাধিক হাদীস রয়েছে যেখানে রসূল সাঃ তাবিজ বা তামিমা লটকাতে নিষেধ করেছেন।
রসূল সাঃ কোন সাহাবী রাঃ এর শরীরে তাবিজ বা তামিমা দেখলে সেটা ছিড়ে ফেলতেন।
রসূল সাঃ যখন লোকদের তামিমা ব্যবহার করতে দেখলেন তখন তিনি সেটা ছিড়ে ফেলে কোরআন ও হাদীসের দোয়া শিখিয়ে দিয়েছিলেন।কেন তিনিতো বলতে পারতেন তোমরা যখন তামিমা পছন্দই করো এর অনুরুপ কোরআন ও হাদীসের দোয়া লিখে ঝুলিয়ে রাখো অর্থাৎ তাবিজ ব্যবহার করো,,তিনি এটা কেন বলেন নি? বরণ রোকাইয়া বা কোরআন ও হাদীসের দোয়া শিক্ষা দিলেন।
শেষ কথা,, রসূল সাঃ থেকে যদি একটি প্রমাণ কেও দিতে পারে যে,রসূল সাঃ কোরআন ও হাদীস দিয়ে তাবিজ ব্যবহার করেছেন বা সাহাবীদেরকে ব্যবহার করতে বলেছেন।
তাহলে আজকেই তাবিজ ঝুলানো শুরু করবো। (জাযাকাল্লাহ খইরান)
আমার কথায় ভুল হলে ধরিয়ে দিবেন, শুধরে নিবো,ইনশাআল্লাহ।
No comments:
Post a Comment