Jagrotobibek24

তথ্য, বিনোদন, সমাজ, বিজ্ঞান ও সাহিত্য সমৃদ্ধ একটি সুন্দর ব্লগ

Sponsored by: VINNOMATRA

GoRiseMe.com

Followers

Saturday 27 August 2022

গরীবের মৎস বাজার!

 গরীবের মৎস বাজার!







এই ছবিটি ভালো করে দেখুন। খুব সুন্দর কোনো ছবি নয় অবশ্যই। ছবিটি তোলা ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কোনো এক ছোট্ট বাজার থেকে। এটি কিন্তু একটি মাছের দোকান।
বাংলাদেশের যে কারও কাছে মনে হতেই পারে, মাছের দোকানে মাছ এত কম কেন? মাছগুলো কাটাই বা কেন? এগুলো কেউ কি কিনে নিয়ে কাটিয়ে নিচ্ছেন?কাটা মাছের আবার দোকান হয় নাকি?
লক্ষ্য করে দেখুন, এখানে নানাভাবে কাটা আছে মাছগুলো। কোনোটি মাঝখান থেকে কাটা। কোনোটির মাথা আছে কেবল। কোনোটির আবার শুধুই লেজ। মাঝের অংশের বিভিন্ন সাইজের পিস করাও আছে। যার যেটি পছন্দ কিনে নিয়ে যান। আপনি ঠিকই পড়ছেন। আপনি চাইলে কেবল ঐ মাথাটিই কিনতে পারবেন। অথবা ঐ লেজটি।
আমার নিজের চোখে দেখা। একজন এসে বললেন, "দাদা, একশো মাছ দিন তো!" দোকানী কাটা মাছের একপাশ থেকে আবার কেটে একশো গ্রাম মাছ ওজন করে দিলেন। ভদ্রলোক আবার বললেন, "ওটা দু'পিস করে দিন।" দোকানী তাও করে দিলেন।
এখন বলতেই পারেন, পশ্চিমবঙ্গের মানুষ এত কৃপণ কেন? আমিও তাই ভাবতাম আগে। ওদের এসব নিয়ে অনেক রসিকতা করতাম। এখন করি না। তার কারণ বলছি খুলে।
বাংলাদেশে রুই মাছের কেজি 300 থেকে 400 টাকা। তার বেশিও আছে। এখন একজন স্বল্প আয়ের মানুষের যদি তিন কেজি ওজনের রুই মাছ খেতে ইচ্ছে করে, তার পক্ষে একটি মাছ কিনে খাওয়া সুদূর পরাহত। কারণ এদেশে সাধারণত মাছ কেটে বিক্রি হয় না। আর এতটা মাছ একবারে কিনে রাখবেনই কোথায়?
একদিন বাজার থেকে এক হালি ইলিশ মাছ কিনে রিকশা করে ফিরছিলাম। বৃদ্ধ রিকশাওয়ালা মাছের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, "বাজান, কত কইরা লইচে একটা মাচ?" আমি বললাম, বারোশো করে। তাই শুনে তিনি মন ভার করে বললেন, "হ্যার লেইগাই তো আমগো আর খাওনের বরাত নাই!" এখনও ইলিশ মাছ খেতে গেলে ঐ বৃদ্ধ মানুষটির কথা মনে পড়ে।
আমি হিসেব করে দেখলাম, এই মাছ বাজারে কেটে বিক্রি করলে ঐ রিকশাওয়ালাও একদিন হয়তো সাহস করে দুইশো টাকা দিয়ে তিন পিস মাছ কিনে ছয় পিস করে নিয়ে রান্না করে এক বেলা তৃপ্তি করে খেতে পারতেন। অথবা রুই মাছের পেটির মাছ। কেউ হয়তো রোজ খান এসব। আর তারা না হয় খেলেন বছরে এক-আধবার। তবু বঞ্চিতের কাতারে তো রয়ে গেলেন আজীবন কেবল কম রোজগার থাকার কারণে।
ওখানে দোকান থেকে একটি আপেল কেনা যায়। মিষ্টির দোকানে এক পিস, দুই পিস মিষ্টির জন্যে প্যাকেট আছে আলাদা। বরং এক কেজি ওজনের প্যাকেট পাওয়া মুশকিল। আর আমরা আমাদের ফুটানি এতই বেশি যে, আধা কেজির নিচে মিষ্টি কিনতে চাইলে দোকানদার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকবেন। এক জোড়া আপেল কেনাও মুশকিল আছে। সেদিন কলা কিনতে গিয়ে আমাকে এক হালি কলা দিলেন না ধানমন্ডির এক দোকানদার। বললেন, এক ডজনের নিচে বিক্রি করেন না।
ওপার বাংলায় একজন চা বিক্রেতার বাড়িতেও দোতলা বিল্ডিং দেখতে পাওয়া যায়। আর আমাদের এখানে কেউ কেউ মাসে লাখ টাকা বেতন পেয়েও মাসের শেষে ধার করে চলেন। আমরা যা আয় করি তার সব খেয়েই শেষ করে দিই। আর আমাদের মতো ফুটানিবাজ জাতি দুটো আছে বলে তো মনে হয় না।
সামান্য এই মাছের দোকানের সামনে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকেও কতকিছু শিখলাম।
সবার ভালো হোক! জগতের কল্যাণ হোক!

Collected

No comments:

Post a Comment

International