Jagrotobibek24

তথ্য, বিনোদন, সমাজ, বিজ্ঞান ও সাহিত্য সমৃদ্ধ একটি সুন্দর ব্লগ

Sponsored by: VINNOMATRA

GoRiseMe.com

Followers

Tuesday 24 October 2017

একাত্তরের শিশু - মুহাম্মদ মাসুম বিল্লাহ

একাত্তরের শিশু
মুহাম্মদ মাসুম বিল্লাহ



মরা ছিলাম শিশু মুক্তিযোদ্ধা। দেশকে শত্রুর হাত থেকে মুক্ত করতে বড়দের সাথে আমরাও বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেছি। কথাগুলো শুনে কোলের কাছে এসে বসে মেহনাজ ও রিজভী। দাদু তানভীর আহমেদ পরম মমতায় আদর করেন মেহনাজ ও রিজভীকে। সারাদিন স্কুল আর খেলাধুলার সময় ছাড়া চোখে চোখে রাখেন ওদের দাদু। মেহনাজ ও রিজভী খুবই ভালোবাসে তাদের দাদুকে। দাদী মমতাজ বেগম ৩ বছর আগে ইন্তেকাল করেছেন। দাদীর কথা মনে এলেই ওরা নিরবে চোখের পানি ফেলে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদে। সীমাহীন আদরেই বড় হচ্ছিল মেহনাজ ও রিজভী। কিন্তু ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে এভাবে চলে যাওয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়ে পরিবারের সকলেই।
তানভীর আহমেদ প্রতিদিন ফজরের নামাজ মসজিদে আদায় করে কিছুক্ষণ কুরআন তেলাওয়াত করেন। তারপর মসজিদের পশ্চিমে কবরের পাশে দাঁড়িয়ে স্ত্রী মমতাজ বেগমের জন্য দোয়া; বাসায় এসে নাতীদের সাথে সময় কাটানোই বর্তমানে তাঁর প্রধান কাজ। মেহনাজ দাদুর কোলের কাছে এসে বসতে দেখে রিজভী আরো কাছে এসে বসে। মুক্তিযুদ্ধের ঘটনা শুনতে চেয়ে মেহনাজ প্রশ্ন করে-
-আচ্ছা দাদু, শিশু মুক্তিযোদ্ধা মানে কী?
দাদু- দেশ স্বাধীন করার জন্য ১৯৭১ সালে যে যুদ্ধ হয়েছিল তখন আমার বয়স ছিল প্রায় ১০ বছর। আমি প্রাইমারী স্কুলে ৪র্থ শ্রেণিতে পড়ালেখা করতাম। মুক্তিযুদ্ধের সাব-কমান্ডার হোসেন আলী কাকা আমাদেরকেও কাজে লাগানোর জন্য ১২ জনের একটি নামের লিস্ট করলেন। ঐ লিস্টে আমার নাম লেখা হলো এক নম্বরে।
-এক নম্বরে দিলো কেন?
উত্তরে দাদু বললেন- আমি তোমার মতো বুদ্ধিমান ছিলাম। সবার সাথে কথা বলতে পারতাম। যেকোন দায়িত্ব দিলে তা সুন্দরভাবে পালন করাটা ছিলো আমার ভালোলাগার বিষয়। এসব দেখে হোসেন আলী কাকা আমাকে দেশ রক্ষার আন্দোলন কী ও কেন? এবং শত্রুদেরকে পরাজিত করার বিষয়ে আলাদা ট্রেনিং দিয়েছিলেন। আমার কাজ ছিলো পাক সেনাদের কার্যবিধি ফলোআপ করা, তাদের ক্যাম্পে গিয়ে ওরা কী শলা পরামর্শ করে তা জেনে হোসেন আলী কাকাকে জানিয়ে দেয়া। মুক্তিযোদ্ধাদের খাবার দাবার গোপনে পৌঁছে দেয়া এবং আরও একটি কাজ আমি করতাম- রিজভী আরও এগিয়ে আসে দাদুর কাছে। আবারও প্রশ্ন করে-
-দাদু, আর কোন কাজটি করতে তুমি?
দাদু- আমি মুক্তিযোদ্ধাদের এক ক্যাম্প থেকে অন্য ক্যাম্পে গোলাবারুদের প্যাকেট বা বস্তা অতি গোপনে পৌঁছে দিতাম।
একবারতো ধরা পড়েই গিয়েছিলাম প্রায়। আমি ছোট মানুষ হিসেবে পাকসেনারা আমাকে কিছু বলতো না। কিন্তু মাথায় করে যখন গোলাবারুদের বস্তা নিয়ে যাচ্ছিলাম তখন ওদের একজন ডেকে বললো- ইয়ে বাচ্চা.. কাহা যাও? আমি উত্তরে বললাম- ঘরমে।
সে আর কিছু বললো না। তবে ঐদিন যদি ধরা পড়ে যেতাম তাহলে নির্ঘাত আমাকে ওরা মেরেই ফেলতো। আল্লাহর অশেষ মেহেরবানীতে আমি সেদিন বেঁচে গিয়েছিলাম।
মেহনাজ দাদুর কাছে প্রশ্ন করে- আচ্ছা দাদু তোমরা কীভাবে দেশকে স্বাধীন করেছো? এ বিষয়ে কিছু বলো না।
দাদু- তোমাদেরকে সে ঘটনাটাইতো বলতে চাই। ১৯৭১ সালের আগে এদেশের নাম ছিলো পূর্ব পাকিস্তান। পশ্চিম পাকিস্তান আর পূর্ব পাকিস্তান মিলে একটি দেশ ছিলো। কিন্তু পশ্চিম পাকিস্তানিরা আমাদের প্রতি অন্যায়ভাবে জুলুম করে আসছিলো। তাদের জুলুম আর অত্যাচার এদেশের মানুষ সহ্য করতে না পেরে সবাই গর্জে ওঠে। যাঁর দৃঢ় নেতৃত্বে অনমনীয় মনোভাব ও আপোষহীন সংগ্রামের ফলে আজ আমরা বাংলাদেশের মাটিতে স্বাধীনভাবে নিজেদের অস্তীত্ব নিয়ে পৃথিবীর বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পেরেছি তিনি হলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
এদেশের স্বাধীনতা অর্জনের জন্য যিনি সকল জনগণকে উদ্বুদ্ধ করে চূড়ান্তভাবে স্বাধীনতা অর্জনের ডাক দিয়ে ৭ মার্চ ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে লক্ষ লক্ষ জনতার মাঝে তিনি তাঁর ভাষণে বলেছিলেন-
‘এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম,
এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম’
মেহনাজ ও রিজভী একথা শুনে নড়ে চড়ে বসে এবং দাদুকে বলে- দাদু, আমরা তো টিভি, রেডিও ও মাইকে প্রায়ই এ ভাষণের কিছু অংশ শুনে থাকি। তানভীর আহমেদ নাতীদেরকে বুঝিয়ে বললেন- তোমরা এভাবে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসগুলো আমার মাধ্যমে এবং বই পুস্তকের মাধ্যমে আরও জানতে পারবে। কেননা, যারা ইতিহাস জানে না তারা এগিয়ে যেতে পারে না। দেশকে এগিয়ে নিতে হলে ইতিহাস জানতে হবে। আর একটি স্বাধীন দেশের নাগরিকের জন্য মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস অবশ্যই জানা কর্তব্য।

লেখক: সম্পাদক, মাসিক ভিন্নমাত্রা
 

No comments:

Post a Comment

International