উখিয়ার কুতুপালং ও স্বপ্ন পূরণের দিন
মুহাম্মদ মাসুম বিল্লাহ
মুহাম্মদ মাসুম বিল্লাহ
বিপদেই বন্ধুকে চেনা যায়। বিপদগ্রস্থ মানুষকে সাহায্য ও সহযোগিতা করাই একজন মানুষের শ্রেষ্ঠ গুণ। এই মহৎ ও মানবীয় গুণটি যার আছে তার চেয়ে শ্রেষ্ঠ আর কে বেশি? মহানবী (সঃ) হাদিসে বলেছেন, ‘তোমরা ক্ষুধার্তকে খাদ্য দাও, রুগ্ন ব্যক্তির সেবা কর এবং বন্দীকে মুক্ত কর অথবা ঋণের দায়ে আবদ্ধ ব্যক্তিকে ঋণমুক্ত কর। (সহীহ বোখারী শরীফ)। অন্য হাদিসে মহানবী (সঃ) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি মুমিনের পার্থিব একটি মুসিবত দূর করবে, আল্লাহ কিয়ামতের দিন তার মুসিবতকে দূর করে দিবেন। আর যে ব্যক্তি কোন অভাবী মানুষকে স্বচ্ছল করে দিবে আল্লাহ তাকে ইহকাল ও পরকালে স্বচ্ছল করে দিবেন এবং আল্লাহ বান্দার সাহায্য করবেন যদি বান্দাহ তার ভাইয়ের সাহায্য করে। (সহীহ মুসলিম শরীফ)।
বার্মার আরাকান রাজ্যের মুসলিম রোহিঙ্গাদের প্রতি সেদেশের সেনাবাহিনীরা দীর্ঘদিন পর্যন্ত নির্যাতনের মাত্রা ছাড়িয়ে ঘরবাড়ি আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে জীবন্ত মানুষকে হাত-পা বেঁধে গায়ে কেরোসিন ঢেলে দিয়ে পুড়িয়ে এবং মা-বোনদের অসম্মানিত করে এমনকি ছোট ছোট শিশুদের গলাটিপে, গুলি করে কখনও বা নরপিশাচের মতো জবাই করে হত্যা করে চলেছে। যা দেখে বিশ্বয়নের এই সভ্য যুগে বিশ্ববাসি হতবাক। এমনই এক মুহূর্তে এক দরদি মন নিয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মায়ানমারের সীমান্ত খুলে দিয়ে বাংলাদেশের কক্সবাজার জেলার উখিয়া ও টেকনাফে আশ্রয় দিতে নির্দেশ দেন। এমনকি তিনি নিজে গিয়ে রোহিঙ্গা এক শিশুকে জড়িয়ে ধরে আবেগ জড়িত কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।
বার্মার আরাকান রাজ্যের মুসলিম রোহিঙ্গাদের প্রতি সেদেশের সেনাবাহিনীরা দীর্ঘদিন পর্যন্ত নির্যাতনের মাত্রা ছাড়িয়ে ঘরবাড়ি আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে জীবন্ত মানুষকে হাত-পা বেঁধে গায়ে কেরোসিন ঢেলে দিয়ে পুড়িয়ে এবং মা-বোনদের অসম্মানিত করে এমনকি ছোট ছোট শিশুদের গলাটিপে, গুলি করে কখনও বা নরপিশাচের মতো জবাই করে হত্যা করে চলেছে। যা দেখে বিশ্বয়নের এই সভ্য যুগে বিশ্ববাসি হতবাক। এমনই এক মুহূর্তে এক দরদি মন নিয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মায়ানমারের সীমান্ত খুলে দিয়ে বাংলাদেশের কক্সবাজার জেলার উখিয়া ও টেকনাফে আশ্রয় দিতে নির্দেশ দেন। এমনকি তিনি নিজে গিয়ে রোহিঙ্গা এক শিশুকে জড়িয়ে ধরে আবেগ জড়িত কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।
আমি ব্যক্তিগত জীবনে কোন অসহায়, গরিব, ইয়াতিম, মিসকিন এদের মধ্যে বিশেষভাবে শিশু, বৃদ্ধ ও নারীদের যে কোন সমস্যায় সবার আগে এগিয়ে যেতে চেস্টা করি এবং সাধ্য অনুযায়ী সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেই। রোহিঙ্গাদের সমস্যাগুলো এ.টি.এন বাংলার সিনিয়র সাংবাদিক মুন্নী সাহা তিনি উখিয়ায় অবস্থান করে ধারাবাহিককভাবে প্রচার করতে থাকেন এবং অন্যান্য মিডিয়ায় দেখে আমার ভেতরটা দুঃখে এবং ক্ষোভে দুমড়ে মুচড়ে যেতে থাকে। যে কারণে ফেসবুকে অংসান সুচির বিরুদ্ধে ছড়া, কবিতা এবং স্টাটাস দিয়ে পত্র-পত্রিকায় সকল নৃসংশতা বন্ধ কর’ নিয়মিত লিখতে থাকি। এরই মধ্যে আলোচনা চলতে থাকে অন্যধারা সাহিত্য সংসদ এর প্রতিষ্ঠাতা আমি যাঁকে বলি কাব্য অঙ্গনের এক লৌহ মানব কবি ড. সৈয়দ রনো ভাইয়ের সাথে। সিদ্ধান্ত হয় ত্রাণ সামগ্রী নিয়ে এবং সংবাদ সংগ্রহের জন্য সেখানে যাবো। আমরা ক্রমন্বয়ে আমাদের এ দল ভারি হয়ে ৩৩ জনের লিস্ট করা হয়। কবি মুহাম্মদ নূরুল হুদা, কবি আসলাম সানী ভাইসহ তারিখ ঠিক করা হয় ২৯ সেপ্টেম্বর, বৃহস্পতিবার, বিকাল ৫.০০ টায় উত্তরা থেকে গাড়ি ছাড়বে। তারপর মিরপুর, ফার্মগেট ও শাহবাগ থেকে বাকী সদস্যগণ উঠবেন। কবি ক্যামেলিয়া আহমেদকে আহবায়ক এবং আমাকে সদস্য সচিব করে ৭ সদস্য বিশিষ্ট একটি প্রোগ্রাম বাস্তাবায়ন কমিটিও গঠন করা হয়। নির্ধারিত দিনে রওনা হওয়ার আগে আমার পরিচিত এবং আত্মীয় স্বজনদের বিষয়টি জানালে স্বতস্ফূর্তভাবে এগিয়ে আসেন তারা। কাপড় ব্যবসায়ী বন্ধু আরিফ ভাই প্রায় ১ লক্ষ টাকার নতুন কাপড় দিলেন। ছোট ভাই জিয়ার মাধ্যমে অন্য একটি গার্মেন্টস থেকে শিশুদের জন্য প্রায় ১ হাজার পিছ শার্ট তৈরি করে নিলাম। শুকনা খাবার কিনে দিলেন অনেকেই। দিলেন- চিড়া, মুড়ি, বিস্কুট, চানাচুর, দেশলাই, মোমবাতি, সাবান, টয়লেট পেপার আরও কত কি। নগদ টাকা দিলেন বিভিন্নজনে তা-ও প্রায় সোয়া লক্ষ টাকা। আমাদের উক্ত কমিটি অন্যান্যদের মাধ্যমেও নগদ টাকা পয়সা এবং কাপড় ও শুকনা খাবার এর ব্যবস্থা হতে থাকে। একটি ট্রাক ভাড়া করে এবং একটি মাইক্রোবাস ও মিনিবাস ভাড়া করে রোহিঙ্গাদের মানবিক বিপর্যয়ের খোঁজ নিতে বিশেষ করে প্রত্যক্ষভাবে দেখে শুনে সংবাদ সংগ্রহের জন্য লেখক, সাংবাদিক, কবি ও শিল্পীদের এই টীম চলে যাই তাদের খুব কাছাকাছি। উঁচু নিচ পাহাড় আর সবুজ অরণ্যে ঘেরা কক্সবাজার জেলার উখিয়া থানার কুতুপালং এলাকার ১নং ক্যাম্পে। সেখানকার জেলা প্রশাসনকে অবগত করত: একটি স্লিপ নিয়ে পৌছে যাই। পথিমধ্যে খোঁজ খবর নিয়ে জানতে পারি রোহিঙ্গাদের মধ্যে অসুস্থদের সংখ্যা প্রায় অর্ধেক। সেই সাথে তীব্র পানি সংকট এবং বাথরুম ও টয়লেটের। কক্সবাজার থেকে একটি বড় ট্রাক ভাড়া করে উক্ত নগদ অর্থ দিয়ে অনেকগুলো টিউবওয়েল ও টয়লেটের জন্য রিংস্লাভ, বেড়া ও ছাউনি দেয়ার জন্য টিন কিনে নিয়ে যাই। ঢাকা থেকেই ম্যানেজ হয় ৩ হাজার ওরস্যালাইনের প্যাকেট। ১ হাজার পিছ নাপা ও প্যারাসিট্যামল ট্যাবলেট এবং প্রচুর পরিমাণ ব্যথানাশক ঔষধ। প্রথমেই চেস্টা করি নিজেদের হাতে এসব বিলি করতে। পরে সময়ের অভাবে সেখানে অবস্থানরত এনজিওদের কাছে এবং প্রশাসনের লোকজনদের হাতে ও বেশ কিছু মালামাল সামগ্রী দিয়ে আসি। যেহেতু সদস্য সচিবের দায়িত্বপ্রাপ্ত ছিলাম তাই চিন্তায় ছিলাম ৩৩ জনের বিশাল টীম সবাই মিলে যাতে প্রোগ্রাম বাস্তবায়ন করে সুস্থতার সাথে ঢাকায় ফিরে আসতে পারি। সকলের দেখভাল করা, বিশেষ করে প্রায় ১২০০ কিলোমিটারের জার্নি। সিডিউল মত যাওয়ার এবং খাওয়া-দাওয়া, কক্সবাজারে এসে অবস্থান করা ইত্যাদি। সুবিধা হয়েছিল কক্সবাজারের সমুদ্র তীরে অবস্থিত হোটেল ওশান প্যালেস এর মালিক মোহিন ভাই আমার বন্ধু মানুষ। তিনি হোটেল ভাড়া ৬০% ডিসকাউন্ট করে দেন। এতে আমাদের ব্যক্তিগত খরচও খুব কম হয়েছে। রোহিঙ্গা ইস্যুটি খুবই জটিল একটি বিষয়। জাতিসংঘের অধিবেশনেও এটি অন্যতম এজেন্ডা হিসেবে বিশ্বনেতারা আলোচনা করেছেন। অংসান সুচিকে সবাই তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। বিশেষ করে শান্তিতে নোবেল বিজয়ী একজন নেত্রী তার দেশে এহেন ঘৃণ্য কাজ হতে পারে যা বিশ্ববাসীকে হতবাক করে দিয়েছে। যেহেতু মানবিক বিপর্যয়ের মুখোমুখি হয়ে আমাদের দেশে প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা এসেছে। তাদেরকে সাহায্য এবং নিরাপত্তা দেয়া আমাদের দায়িত্ব। অতিথি পরায়ন হিসেবে আমাদের রয়েছে হাজার বছরের ইতিহাস ও ঐতিহ্য। তবে আমাদের বিশ্বাস, সেদিন বেশি দূরে নয় যেদিন এসব নিপীড়িত, নির্যাতিত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠির নিকট মায়ানমারের শাসকদের নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে হবে।
অবশেষে ছলছল করা আঁখি যুগল নিয়ে ঢাকা ফিরে আসলেও স্মৃতির পাতায় অম্লান হয়ে আছে। সিদ্ধান্ত নিয়েছি দেশে কিংবা বিদেশেই হোক সকল নির্যাতিত ও নিপীড়িত মানুষের পাশে দাঁড়াতে চাই। আল্লাহপাক যেন কবুল করেন।
-আমীন।
লেখক: সম্পাদক, মাসিক ভিন্নমাত্রা ও সভাপতি (উত্তরা শাখা) জাতীয় মানবাধিকার সোসাইটি।
অবশেষে ছলছল করা আঁখি যুগল নিয়ে ঢাকা ফিরে আসলেও স্মৃতির পাতায় অম্লান হয়ে আছে। সিদ্ধান্ত নিয়েছি দেশে কিংবা বিদেশেই হোক সকল নির্যাতিত ও নিপীড়িত মানুষের পাশে দাঁড়াতে চাই। আল্লাহপাক যেন কবুল করেন।
-আমীন।
লেখক: সম্পাদক, মাসিক ভিন্নমাত্রা ও সভাপতি (উত্তরা শাখা) জাতীয় মানবাধিকার সোসাইটি।
No comments:
Post a Comment