Jagrotobibek24

তথ্য, বিনোদন, সমাজ, বিজ্ঞান ও সাহিত্য সমৃদ্ধ একটি সুন্দর ব্লগ

Sponsored by: VINNOMATRA

GoRiseMe.com

Followers

Wednesday 1 November 2017

রাস্তায় সন্তান প্রসবঃ সভ্য সমাজের প্রতি ধিক্কারের বহিঃপ্রকাশ - এম. এ. মাসুম

রাস্তায় সন্তান প্রসবঃ সভ্য সমাজের প্রতি ধিক্কারের বহিঃপ্রকাশ
এম. এ. মাসুম





বাংলাদেশ নিয়ে অনেক উচ্চাকাঙ্খা প্রকাশ করা হচ্ছে। অর্থনীতিতে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ এবং পরবর্তীতে উচ্চ আয়ের দেশ হওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করছি। আমাদের মাথাপিছু আয় এবং গড় আয়ু বাড়ছে। শিক্ষা, চিকিৎসা, জীবনযাত্রা  ইত্যাদিতে উন্নতি হচ্ছে। আন্তর্জাতিক পরিসংখ্যানে মানব উন্নয়ন সূচকে আমাদের অনেক উন্নতি সাধন হয়েছে। প্রতি বছর বাজেটে হাজার হাজার কোটি টাকা চিকিৎসা খাতে ব্যয় ধরা হচ্ছে। সে সাথে বিশ্বমানের চিকিৎসা সেবা এদেশেই দেয়া সম্ভব হচ্ছে। প্রশ্ন হচ্ছে এসব চিকিৎসা সেবা কে পাচ্ছে শুধু কি পয়সাওয়ালা এবং ক্ষমতাধররাই পাচ্ছেন নাকি নিম্নবিত্তের দরিদ্র মানুষও পাচ্ছেন।
   
সাম্প্রতিক সময়ের একটি সংবাদ সারা দেশের এমনকি বিশ্বের বিবেকবান মানুষের হৃদয়কে নাড়া দিয়েছে। জানা যায়, যশোর থেকে আশা পারভিন আক্তারের ঢাকায় থাকার কোন যায়গা নেই। বেশ কয়েক মাস আগে তার স্বামী তাকে ছেড়ে চলে যায়। এরপর থেকে সে গুলিস্তান গোলাপ শাহ মাজারে থাকতেন। হঠাৎ তার প্রসব ব্যথা শুরু হয়। পরিচিত একজনের মাধ্যমে তিনি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে যান চিকিৎসার জন্য। কিন্তু তারা সেখানে চিকিৎসা না দিয়ে পারভিনকে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ (মিটফোর্ড) হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়ার জন্য পরামর্শ দেয়। পারভিন মিটফোর্ড হাসপাতালে যাওয়ার পর হাসপাতালের লোকজন তাকে আজিমপুর মাতৃসদন হাসপাতালের যাওয়ার জন্য বলেন। দুইটি সরকারি হাসপাতাল ঘুরে তিনি আসেন আজিমপুর মাতৃসদন ও শিশুস্বাস্থ্য প্রশিক্ষণ হাসপাতালে। কিন্তু সেখানে তার নামে কার্ড কিংবা রেজিস্ট্রেশন না থাকায় তারা পারভিনকে ভর্তি নেবে না বলে জানান। কোন একজন নারী চিকিৎসক পারভিনের সিজার করতে হবে এবং এজন্য ১২০০ থেকে ১৫০০ টাকা লাগবে বলে জানান। কিন্তু পারভিনের হাতে চিকিৎসা নেয়ার মত কোন টাকা পয়সা নেই। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পারভিনকে সেখান থেকে তাড়িয়ে দেয়। অবশেষে পারভিন হাসাপাতালের পার্শ্বে শতশত মানুষের মধ্যেই পিচ ঢালা রাস্তায় প্রসব বেদনায় পড়ে যান। রাস্তায় চলাচলরত কিছু মহিলা পারভিনের পাশে এগিয়ে আসেন এবং তাদের শাড়ির আচলের মাধ্যমে পর্দা তৈরি করে সেখানে বাচ্চা প্রশব করান। মিডিয়ায় বিষয়টি প্রকাশ হওয়ার ফলে দেশ বিদেশের কোটি কোটি মানুষ ঘটনাটি প্রত্যক্ষ করেন।

স্বাধীন দেশের রাজপথে প্রকাশ্য দিবালকে শতশত মানুষের চোখের সামনে একজন নারী প্রসব করবে আর রাষ্ট্রের কিছুই করার নাই এটাতো হতে পারে না। এ ঘটনা রাষ্ট্রের চিকিৎসা সেবার প্রতি একজন নারীর ধিক্কারের বহিঃপ্রকাশ। কোন সভ্য সমাজে এ ঘটনা মেনে নেয়া যায় না। পারভিন অর্থের অভাবের কারণে কোন বেসরকারি হাসপাতালে যাননি। তিন তিনটি বৃহৎ সরকারি হাসপাতালে কোনটাতেই কি পারভিনের চিকিৎসার ব্যায়ভার মেটানোর সামর্থ ছিল না? আসলে সরকারি হাসাপাতালগুলো দুর্নিতীর আখড়ায় পরিণত হয়েছে। সে সাথে এখানে আয়া ও দালালদের দৌরাত্ব অত্যাধিক। ফলে এ হাসাপাতালগুলোতে দরিদ্র মানুষের স্থান হয় না। তাদের চিকিৎসার অবহেলার এটি একটি জ¦লন্ত উদাহরণ। এসব হাসপাতালগুলোতে প্রায়ই বিভিন্ন অনিয়মের কথা শুনা যায়। মাঝে মাঝে বাচ্চা চুরির মত ঘটনাও ঘটে। এসব অনিয়ম দেখার কেউ নেই।    
তিনটি হাসপাতাল ঘুরেও চিকিৎসা না পেয়ে পারভীন নামে এক প্রসূতি রাস্তায় সন্তান প্রসব করতে বাধ্য হওয়ার ঘটানায় স্বপ্রণোদিত হয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। এ ঘটনায় দায়ীদের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেয়া হবে না এবং প্রসূতিকে ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে না তা রুলে জানতে চাওয়া হয়েছে। আদালত এ ঘটনাকে দুঃখজনক বলে অবিহিত করে বলেছেন, গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদ আদালতের নজরে এসেছে। এটি আমাদের মতো একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রেও সভ্যতার উপর কালিমা লেপন।
পারভিন যে সন্তান জন্ম দিয়েছিল তা জন্মের কিছুক্ষণ পরই মারা গেছে। মূলতঃ চিকিৎসা না পাওয়ার কারণেই শিশুটির মৃত্যু ঘটেছে। চিকিৎসার অবহেলায় একজন নবজাতকের মৃত্যুর জন্য কে দায়ী হবে? জানা যায়, এ ঘটনায় সাহেদা নামে এক আয়াকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। যেসব ডাক্তার ও নার্সরা চিকিৎসা না দিয়ে পারভিনকে হাসপাতাল থেকে তাড়িয়ে দিলো তাদের কি হবে? তাছাড়া ঢাকা মেটিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও মিটফোর্ড হাসাপাতাল কর্তৃপক্ষ যে দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছে সেটারও দৃষ্টান্তমূলক বিচার হওয়া উচিত।
মিডিয়ার কল্যাণে হয়তো আমরা একজন পারভিনের দুর্দশার কথা জানতে পেরেছি। সরকারি হাসাপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা দরিদ্র মানুষের বিতাড়িত হওয়ার ঘটনা হর হামেশাই ঘটে তা হয়তো মিডিয়াতে সেভাবে প্রকাশ পায় না। প্রকৃতপক্ষে হত দরিদ্র পারভিনরা শুধুই চিকিৎসা থেকে বঞ্চিতই হয় না হাসপাতালের একদল আয়া, নার্স ও চিকিৎসব দ্বারা লাঞ্জিতও হয়।

সরকারি হাসপাতালে নিয়ম অনুযায়ী পারভীনের মতো দুস্থ নারীরা বিনা মূল্যে প্রসবকালীন সেবা পাওয়ার কথা। তাছাড়া পেশাগত দায়িত্বের কারণে হাসপাতালে কর্মরত নার্স, ডাক্তার এবং অন্যান্যদের আচরণে মানবিক হওয়া উচিত। কিন্তু পারভিনের প্রতি কেন নিষ্ঠুর আচরণের মাধ্যমে নূন্যতম চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত করা হলো তা তদন্ত কেের বের করে দায়ীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা উচিত। সে সাথে সরকারি হাসপাতালগুলোতে নানা অনিয়মের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া দরকার।

লেখকঃ কলামিস্ট

No comments:

Post a Comment

International