জীবনানন্দের উপন্যাস
কল্যাণী
নূরহাসনা লতিফ
জীবনানন্দকে
আমরা কবি হিসেবেই জানি। কবিতার মধ্য দিয়ে আমাদের যা দিয়ে ছেন তা ঐশ্বর্যময়। তাই বলে
গদ্যের ঘরেও তার কমতি নেই। কল্যাণী উপন্যাস একটা চমকপ্রদ উপন্যাস। রায় চৌধুরী মশাই এর পরিবারের কাহিনীই কল্যাণী উপন্যাস। তার এক মাত্র মেয়েকে নিয়েই এ
উপন্যাসের নামকরণ করা হয়েছে। রায় চৌধুরীর তিন ছেলে ও এক মেয়ে।শালিখ বাড়ি নদীর পাশে তাঁর বাড়িটি। এটা তৈরি হয়েছে ক্লাইভের আমলে। রায় চৌধুরী ছেলেদের নিয়ে চিন্তিত। শুধু মেজ
ছেলে আয় রোজগার করছে । সে ডিষ্ট্রিক কোর্টে প্রাকটিস
করে। রায় মশাই সেই আমলের বিএ পাশ। লেখাপড়ার চর্চা আছে। লাইব্রেরী আছে বাড়িতে ।
কলকাতায় থেকে পড়াশুনা করে কল্যাণী । শালিখ বাড়িতে এলে ওর ভাল লাগে না। বাবা ওকে মায়ের মত হওয়ার জন্য প্রভাবিত করেন।কল্যাণী কলকতা গেলে বাবার কথা রাখার চেষ্টা করে। বাবাকে চিঠিও দেয়। পূজোর
ছুটিতে দেশে এলো। দেখলো, ওদের
বাড়িতে এক অদ্ভুত মানুষ
। চীনাদের মত মুখ। সে কূজো, মাথার চুল পাতলা
মাথায় টাক আছে। মুখের চার পাঁচটা আচিল। আচিলের ভেতর থেকে চুল বেরিয়ে এসেছে। ওকে কল্যাণীর ভাল লাগে না কিন্তু
বাড়ির সবাইকে গুনে মুগ্ধ করে রেখেছে। লোকটা.. এরপর দেখলো লোকটা কল্যাণীর ব্যক্তিগত
ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করছে। বাবা সাহায্য করছে ওকে ।
ইতোমধ্যে প্রচার করা হয়েছে চন্দ্রমোহনের অনেক
টাকা। সবার ভেতরে একটা লোভনীয় ব্যাপার উঁকি মারছে। কারন তাদের জমি দারিতে ধ্বস নেমেছে। এবং সবাই চাচ্ছে কল্যাণীর
সাথে ওর বিয়েটা হোক। এমনকি কল্যাণীর বন্ধু অবিনাশও বললে চন্দ্রমোহনকে বিয়ে করবার কথা। ওর
বাহ্যিক রুপের চেয়ে গুণ বেশি।। কল্যাণী এ নিয়ে
নিজের মনের সাথে যুদ্ধ করছিল। বাড়ির সবাই যাত্রা দেখতে যাওয়ায় চন্দ্র মোহোনকে ভাত
দেয়ার ভার পড়লো ।এতেই যেন জীবনের মোড় ঘুরে গেলো। সুযোগ
কাজে লাগালো চন্দ্রমোহন।। অভিনয়ের বদৌলতে কল্যাণীকে দখল করে নিলো। যে লোকটাকে ঘৃণা করতো তাকেই বিয়ে করে ফেললো। কল্যাণী।স্মার্ট আধুনিক
কল্যাণীর জীবন শূরু হোলো অন্য অধ্যায়। ওর পরিবারের সবাই ভেবেছিলো এবিয়েতে কল্যাণী
সুখি হবে কিন্তু তা হয়নি।চন্দ্রমোহনের সবটাই ছিল অভিনয়। সম্পতি ও টাকার যে হিসেব সে পঙ্কজবাবুকে
দিয়েছে তার সবটাই ভুয়া। মাকে চিঠিতে জানিয়েছে কল্যাণী ‘তোমরাতো জানতেই পেরেছো মা
যে সাত আট কোটি টাকার কিছু ব্যবসা নয়-ব্যবসাই নয়,ব্যাঙ্কে ওঁর পনেরো হাজার টাকা
আছে মাত্র। তারি সুদে আমাদের চলে' এই টাকার সাত হাজার টাকাই ছিলো কল্যাণীর বাবার দেয়া যৌতুক ।আসলে একজন স্ত্রীর
যা করণীয় কল্যাণী তা করেছে। কলকাতায় পড়া
আধুনিক শিক্ষিত মেয়ে ঠগ স্বামীকেই মেনে নিয়ে ছিল। তাই সে মাকে বলেছে –'বাবাকে বোল
তুমি যে আমাকে জলে ফেলে দেওয়া হয়নি-আমার স্বামীর কাছেই আমাকে রাখা হয়েছে’
উপন্যাসের শেষ দিকে এসে
বোঝা যায় কি পরিমান
পরিবর্তন হয়েছে। একদিন যাকে সহ্য করতে পারেনি তাকে কেমন
পরম মমতায় জড়িয়ে রেখেছে কল্যাণী। সে
যাই করুক তাকে শেষ পর্যন্ত বাঙ্গালি মেয়ের কাতারে আসতে হয়েছে। বাঙ্গালি মেয়েরা যে স্বামীর ঘরকে স্বামীকে কত আপন মনে করে এ উপন্যাসে তাই দেখাতে চেয়েছেন জীবনানন্দ। মেজভাই তার বাড়িতে আসেনি। ছোট
কিশোর এলে ওর স্বামীকে সহ্য করতে
পারেনা সেটা কল্যাণীর ভাল লাগে না। বিয়ের
আগের রাগ, অভিমান, অহংকার ছেলেমানুষি
কিছুই তার ভেতরে নেই। সে এখন মনের দিক থেকে
অনেকটাই বুড়ো হয়ে গেছে। একদিন বাবা যাকে প্রভাবিত করতেন মায়ের মতো হওয়ার জন্যে
এ খন সে মায়ের চেয়েও বাস্তবমুখি হয়েছে।চন্দ্রমোহনের
আবির্ভাব্ রায় চৌধুরীর ক্ষয়ে যাওয়া
জমিদারীর পথ ধরে।। ওর বড় কৃতিত্ব এই পরিবারটিকে তার চাতুরি আর মুগ্ধ ব্যবহার দিয়ে সম্মোহিত
করে রাখা। নির্দ্ধিধায় ওরা
একমাত্র মেয়েকে তুলে দেয় ওর হাতে। কল্যাণীকে হাতে পেয়ে নিজের মত গড়ে
নিয়েছে সে।
কল্যাণী মা হয়েছে। যে শিশুটি এসেছে
তার কোলে সেও যে একটা ছোট্ট
চন্দ্রমোহন।। এখানে সব চেয়ে বড় জিনিস মাতৃত্ব। আত্ম তৃপ্তিতে সে
পূর্ণ। অতি সাধারণ ধারায় উপন্যাসটি প্রবাহিত হয়েছে । কলাণী এখানে শাশ্বত বাঙ্গালি
নারী ।
No comments:
Post a Comment