রজব , শা’বান ও রমাদান মাস
এবং কিছু ভ্রান্ত ধারণা!
মীর ইসরাত জাহান
চলে গ্যালো রজব মাস । সব-ই মেরাজ এর মাস । আলহামদুলি্লাহ ! 
লাইলাতুল
 মিরাজ ! এটি মানব ইতিহাসে একটি তাৎপর্যপূর্ন দিন! বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (
 স. ) এই দিনে মহান রব্বুল আলামিনের দীদার লাভ করেছিলেন, পূর্ববর্তী সব 
নবীদের সাথে সালাত আদায় করেছেন এবং সেই সালাতে তিনি ইমামতী করেছেন ! আল্লাহ
 সুবহানাহু ওয়া তা’আলা প্রদত্ত বিশেষ ঐশ্বরিক ব্যবস্থায় আল্লাহর রাসুল ( স. ) এই পৃথিবী থেকে মহাশূন্যে যাত্রা করেন, তিনি সিদরাতুল মুনতাহা, লওহে 
মাহফুজ, সপ্ত আসমান পরিভ্রমন করেন, মহান রবের সান্নিধ্য লাভ করেন এবং 
ফিরে আসেন। এই তাৎপর্যপূর্ণ দিনে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ নির্ধারিত হয় এবং ফরজ 
করার নির্দেশ আসে। 
এটাই গুরুত্বপূর্ন এবং শবে মিরাজের 
তাৎপর্য । এ দিনে কোন নফল রোজা বা নফল ইবাদাত করার কোন নির্দেশ বা উপদেশ 
নেই । আমরা ছোটবেলা থেকে প্রচলিত অনেক বিষয়ে বিশ্বাস নিয়ে আবেগবশতঃ নানাবিধ
 ভুল আমলের চর্চা করে যাচ্ছি প্রতিনিয়ত, যার অধিকাংশই পবিত্র কুরআন যা 
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলার কাছে থেকে মানুষের একমাত্র প্রাপ্ত গ্রন্থ 
যার মধ্যে কোন সন্দেহ নেই বলে পবিত্র কুরআন উল্লেখ করেছে। আল্লাহ সুবহানাহু 
ওয়া তা’আলা বলেন , সুরা বাক্বারাহ – ২ , আয়াত নাম্বার – ২ , “ এট সেই কিতাব
 যাতে কোন সন্দেহ নেই , আল্লাহ সচেতন ব্যক্তিদের জন্যে (সচেতন হওয়ার সকল 
মূল তথ্য ধারণকারী ) পথনির্দেশিকা “ । অথচ আমাদের জীবনের প্রয়োজনে শত শত বই
 এর জ্ঞান আহরণ করলেও আমাদেরই দুর্ভাগ্যবশতঃ এই কিতাব পড়ে দেখার সৌভাগ্য 
বন্চিত হয়ে জীবন কাটিয়ে দিচ্ছি । ফলতঃ শব ই মিরাজ এর শিক্ষা প্রতিদিনের 
নির্ধারিত ৫ ওয়াক্ত সালাত ( নামাজ ) কায়েম না করেই অজ্ঞানতাবশতঃ এই দিনে নফল
 রোজা, নফল সিয়াম ( রোজা ) সহ নানা ভুল আমলে বিভ্রান্ত হয়ে, আচ্ছন্ন হয়ে 
আছি বোকার মতো, যে আমলগুলো কেবল নিস্ফলই নয়, অনেক বিদ’আত করে ফেলছি যা 
আমাদের আখিরাতের দুর্ভোগ ও আফসোস এর কারণ হবে । আর আমরা এমন গুরুত্বপূর্ণ 
বিষয়ে ভীষণভাবে বেখবর । কেউ চাইলে তাহাজ্জুত এর সময় ( রাতের শেষ এক 
তৃতীয়াংশ ) কে বেছে নিয়ে আন্তরিকভাবে ক্ষমা চাইতে পারি, রিজিক চাইতে পারি 
এবং আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলার কাছে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত (নামাজ ) পড়তে 
পারার সৌভাগ্য পেতে দু’আ চাইতে পারি, জীবিত ও মৃত আত্নীয় স্বজন, কিয়ামত 
পর্যন্ত পরিবারের সকল সদস্যদের জন্যে, পৃথিবীর সকল মুসলিমদের জন্য ( যারা 
আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে আমল ও ইবাদাহ করেছেন ও করে যাচ্ছেন ) ক্ষমা 
চাইতে পারি । আল্লাহ আমাদের সঠিক জ্ঞান দিন .... আমীন।
শা’বান মাস ও শব ই বরত প্রসংগ :
শুরু
 হলো মু’মিনদের জন্যে আরেকটি পবিত্র মাস শা’বান । এই মাসের প্রথম পনের 
দিনগুলোতে প্রিয় রাসুল (স.) যত বেশি সিয়াম করতেন, এত বেশি আর কোনো মাসে 
করতেন না । এ মাসটিকে আমরা পবিত্র রমাদান এর এক মাস সিয়াম পালনের প্রস্তুতি
 হিসেবে গ্রহণ করে থাকি । আল্লাহর সন্তুষ্টির পথে রুজু হই, আল্লাহর 
শাস্তির ভয়ে ভীত হই, আল্লাহর রাহমাত পেতে আগ্রহী হই । আহমাদ, নাসাঈ প্রমুখ 
মুহাদ্দিস সংকলিত মোটামুটি গ্রহণযোগ্য বা হাসান পর্যায়ের হাদীসে উল্লেখ করা
 হয়েছে যে, শা’বান মাসে বান্দার আমল আল্লাহর দরবারে পেশ করা হয়; এজন্য এই 
মাসে বেশি বেশি নফল সিয়াম পালন করা উচিত। 
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা বলেছেন , " নিশ্চয় আমরা এটা অবতীর্ণ করেছি এক বরকতময় রাতে, নিশ্চয় আমি সতর্ককারী । " 
-- সূরা দুখান - ৪৪: আয়াত : ৩, ৪
আয়াতে উল্লেখিত ‘ বরকতময় রাত ’ বলতে অসাবধানতাবশতঃ কেউ কেউ মধ্য শাবান বা শাবান মাসের ১৫ তম রাতকে বুঝেন ! 
এই
 আয়াতদ্বারা কুরআন নাজিলের সম্মানীত রাত " শব ই ক্বদর " কে বুঝানো হচ্ছে ।
 এটি আমলের জন্য অমৌলিক বিষয় হওয়াতে কুরআনের মধ্যে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে
 এ রাতের কোনো নির্দেশনা খুঁজে পাওয়া যায় না ।
শা’বান মাসের মধ্যম রজনী 
নিসফু শাবান বা ১৪ই শা’বানের দিনগত রাতে মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা 
হিংসুক ও শির্ককারী ব্যতীত তাঁর বান্দাদেরকে ক্ষমা করেন বলে সহীহ হাদীসে 
বর্ণিত হয়েছে। আল্লাহ আমাদের এ প্রস্তুতি গ্রহণ করুন , আমাদের নেক আমল কবুল
 করুন এবং সেইসব ক্ষমাপ্রাপ্তদের মধ্যে শামীল করুন … আমীন
রমাদান মাস , চাঁদ দেখা ও একই সাথে ঈদ প্রসঙ্গে :
আসছে
 পবিত্র রমাদান মাস । পবিত্র কুরআন নাজিলের মাস । আমাদের মনের আবেগে কুরআন 
খতম দেয়ার মাস । খতম মানে শেষ । তার মানে কি আমাদের কুরআন পড়া শেষ? আমাদের
 এত খতম দেয়ার তাৎপর্য কি ! আমরা কি বুঝে পড়ছি ? নাকি এক অক্ষরে দশ নেকীর 
আশায় পড়ছি! আরবী ভাষায় নাজিলকৃত কুরআন নিজ ভাষায় না বুঝে কিছুই কি পালন 
করা সম্ভব? নিশ্চয়ই নয়। তবে কিভাবে নেকী / সওয়াব পাওয়া সম্ভব ! প্রশ্ন 
জাগে মনে। 
রমাদান মাস । সারা পৃথিবীতে সর্বোচ্চ সাড়ে আট 
ঘন্টায় চাঁদ দেখা যাবার কথা গবেষনা থেকে জানি ... দেখা যায় না সবসময় তার 
কারন প্রথম দিনের চাঁদ খুব ক্ষনস্থায়ী হয়, পৃথিবীর প্রকৃতি এবং দেশগুলোর 
ভৌগলিক অবস্থান । কেন তবে দু’দিনে সিয়াম শুরু ও শেষ এবং ঈদ হয়? প্রশ্ন !
আমরা
 আরো জানি যে , সিয়াম ফরজ ইবাদাত , একদিন দেরীতে সিয়াম শুরু করলে একটা ফরজ 
ছুটে গেলে কি জবাব? আবার বছরে পাঁচ দিন সিয়াম রাখা হারাম সেক্ষেত্রে 
পৃথিবীর অন্য দেশ ঈদ করছে আর এদেশে আমরা সিয়াম করলে একটা হারাম করা হচ্ছে 
নয় কি ? এবং এই হারাম চালু আছে বছরের পর বছর ধরে । অনেকে সূর্য ও সময়ের 
হিসেব করেন । পবিত্র কুরআন এ বলা হয়েছে , “ সূর্য সময় নির্ধারণকারী অর্থাৎ 
সালাত ও ইফতারের সময় নির্দিষ্ট করে আর চাঁদ আরবী মাস নির্ধারণ করে যার 
ভিত্তিতে জিলহজ্জ্ব এর ৯ তারিখে আরাফার ময়দানে সারা পৃথিবীর মুসলিম এক হয় ।
 আমরা নিশ্চিন্ত আছি কিভাবে ! সচেতন হবার সময় এখনো আসেনি ? আল্লাহ ক্ষমা করো
 । তাই একই দিনে সিয়াম শুরু ও শেষ এবং ঈদ পালন জরুরী মনে করি ..আল্লাহ 
সুবহানাহু ওয়া তা’আলা সংশোধন কর , পবিত্র করে , কবুল করে নিন ...আমীন
লেখক: কথাসাহিত্যিক ও গবেষক
 
 
 
 
 
 
 
 
![গুরুত্বপূর্ণ লিংক সমূহ:- [Software]](https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEgd7Uhk0-zI7vLfnGe-FcxKizqCZhwcVa3RIvE-sqtRVJO9LHwDe8nREY9vUfEcbzGu6-FiohrFp0tdm2Ta3t59p74gB46tZJjd2Wm4H3eqSrqKvw8E2eoxPWuQ-xI506nMaqyL4w5gDU8/w72-h72-p-k-no-nu/2.jpg) 
 
 
 
 

 
 
No comments:
Post a Comment