Jagrotobibek24

তথ্য, বিনোদন, সমাজ, বিজ্ঞান ও সাহিত্য সমৃদ্ধ একটি সুন্দর ব্লগ

Sponsored by: VINNOMATRA

GoRiseMe.com

Followers

Thursday 28 June 2018

এই গরমে শিশুর ঈদ ও পরিবারের যত্ন- রহিমা আক্তার মৌ

এই গরমে শিশুর ঈদ ও পরিবারের যত্ন
রহিমা আক্তার মৌ



"আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যৎ " শিশুকে সুন্দর ভবিষ্যৎ দিতে প্রয়োজন একটি সুন্দর পরিবারের, আর সুন্দর পরিবার মানেই  সচেতন ও দায়িত্বশীল পরিবার। মুসলমাদের প্রধান দুটি উৎসবের একটি ঈদুল ফিতর। দরজায় কড়া নাড়ছে উৎসবের দিনটি।

এবারের ঈদুল ফিতর হচ্ছে বর্ষার ঠিক প্রথম সাপ্তাহে, গ্রীষ্ম শেষ একটা ভ্যাপসা অতিবাহিত হচ্ছে এখন। এই ভ্যাপসা গরমে সবচেয়ে কষ্টকর সময় কাটে আমাদের শিশুদের। শিশুদের ঈদ মানেই ভিন্ন কিছু, ঈদকে কেন্দ্র করেই শপিংমল গুলো এখন সেজেছে একেবারেই নতুন রূপে। সব শ্রেনীর ব্যক্তিদের জন্যেই রয়েছে পছন্দনীয় শপিংমল। বর্ষা ভ্যাপসা গরমের কথা মাথায় রেখেই ফ্যাশন হাউজগুলো সাজিয়েছে নতুন পোশাকে। বর্ষায় সাধারণত আমরা হালকা রংয়ের পোষাক কম পরে থাকি তাই গাঢ় রংয়ের পোষাক নির্বাচন করে অনেকে। আবার বলা হয় হালকা রংয়ের পোষাকে গরম কম, একটা ঠাণ্ডা  ঠাণ্ডা আভাশ থাকে বলে অনেকে গরম থেকে শিশুকে দুরে থাকতে শিশুর জন্যে হালকা সূতি কাপড়ের পোষাক নির্বাচন করেন। এবার হালকার মাঝে সাদা, চাপা সাদা, হালকা আকাশি কিংবা গোলাপি, হালকা সবুজ, ধূসর, বাদামি হালকা লাল, হলুদ ও নীলের হালকা শেডগুলোকে পছন্দের তালিকায় থাকছে বেশি। প্রিন্টের কাপড়ের ক্ষেত্রে শিশুদের জন্য ছোট বা মাঝারি প্রিন্টের পোশাক বেশি মানানসই।

এই গরমে শিশুর পোষাক নির্বাচনে এলিনা এমদাদ (ফ্যাশন হাউস নিপুণের ডিজাইনার) বলেন-
'এ সময় শিশুদের পোশাক হওয়া উচিত একদম পাতলা, হাতা কাটা ও ঢিলেঢালা। যাতে শিশুর শরীরে সহজেই বাতাস প্রবেশ করতে পারে। গরমের দিনে অন্তত চারবার পোশাক পরিবর্তন করা উচিত। খেলাধুলা, ঘুমানো কিংবা বাসায় পরার জন্য আলাদা পোশাক নির্বাচন করা যেতে পারে।'

গরমের দিনে পরিবারগুলোকে সবার আগে খেয়াল রাখতে হয় শিশুর দিকে। শিশুর খাবার থেকে পোশাক, সব হওয়া চাই আরামদায়ক। তাই ঈদেও শিশুর জন্যে হালকা পাতলা কাপড়ের পোষাকই উপযুক্ত পোষাক। যে পোশাকে শিশু ঘামাবে না, দিনে কয়েকবার করে পোশাক চেঞ্জ করে দেয়া যায়, সে ভাবেই ঈদের প্রস্তুতি পরিবার গুলোর। মনে রাখতে হবে সুন্দর্য্যের কথা ভেবে ভুলেও শিশুকে ভারি বা মোটা কাপড়ের পোষাক দেয়া ঠিক হবে না।

শিশুর জন্যে সুতি কাপড়ের বিকল্প আসলে কিছুই নেই। সুতি কাপড় বাতাস চলাচলে সক্ষম এবং দ্রুত পানি শোষণ করতে পারে বলেই অধিকাংশ মানুষ পরিবারের ছোট সোনামণির জন্যে সুতির পোষাক নিয়ে থাকেন। শিশুরা যেহেতু বেশি ছোটাছুটি করে তাই তাদের ঘামও হয় বেশি। সুতির পাশাপাশি ভয়েল, সুইস ভয়েল,আদ্দি, ভিসকস, মিক্সড ভয়েল, বেক্সি ভয়েলসহ নানারকম সুতি কাপড়ে তৈরি হচ্ছে শিশুদের পোশাকগুলো। এ ছাড়া কটনের সঙ্গে টি-শার্ট ফেব্রিক দিয়েও তৈরি হচ্ছে পোশাক। বাজারে আছে সুতি, লিনেন ও গেঞ্জি কাপড়ের বিভিন্ন ডিজাইনের পোশাক। পাতলা তাঁত কাপড়ও আরামদায়ক।

সুতির ওপরে নেট, সাটিন ইত্যাদি কাপড় ব্যবহার করে পোশাকে জমকালো ভাব আনা হয়েছে। বোতামেও রাখা হয়েছে বিষেশত্ব। ব্যবহার করা হয়েছে ফিতা এবং পমপম। এবার পোশাকের হাতার ছাঁটে গত কয়েকবারের মতই রাখা হয়েছে বৈচিত্র্য। কোনটির ঘাড়ছাটা আবার কোনটি ঘাড় থেকে কনুই পর্যন্ত হাতার ওপরের অংশে বোতাম বা ফিতা  দিয়ে দেয়া হয়েছে। এই পোশাক  গরমে শিশুর জন্যে  যেমন আরামদায়ক  তেমনি ঈদের পোশাকের বিশেষত্বটাও ধরে রাখা যায়।

অধ্যাপক শাহমিনা রহমান (বাংলাদেশ গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের বস্ত্রপরিচ্ছদ ও বয়নশিল্প বিভাগের সহকারী)  বলেন, “শিশুদের জন্য পোশাক নির্বাচনে তাদের আরামের দিকে মনোযোগ দেওয়া উচিত। বাতাস চলাচল করতে পারে এমন পোশাক বেছে নিন, সেক্ষেত্রে সুতি সবচেয়ে ভালো।”

জলবায়ুর প্রভাবে ঋতু পরিবর্তনের সাথে অনেক সময় আমাদের পরিবেশের মিল থাকছে না। প্রতিনিয়ত পরিবর্তন হচ্ছে সেই সঙ্গে প্রকৃতিও বদলায় তার রূপ। এই মেঘ এই বৃষ্টি—এ যেন বিশ্ব প্রকৃতির শিশুসুলভ এক লুকোচুরি খেলা। আবহাওয়ার পরিবর্তনের সাথে সাথে পরিবর্তন আসছে পোশাকেও। আমাদের দেশিয় ফ্যাশন হাউসগুলোও এ সময়ে শিশুদের জন্য তৈরি করে ফ্যাশনেবল সব আরামদায়ক পোশাক। গরমে শিশুর নানা সমস্যা ও প্রতিকারগরমে শিশুর বিশেষ যত্নের প্রয়োজন। এজন্যে পরিবারের প্রয়োজন এ সময় শিশুর খাওয়া-দাওয়া, গোসল ও পোশাক নির্বাচনের সময় বিশেষ যত্নবান হওয়া।

শৈশব ফ্যাশন হাউস শুধু মাত্র শিশুদের পোশাক তৈরি করে থাকে। বর্ষা ও এই গরমে তারা তৈরি করেছে বিভিন্ন ধরনের পোশাক। শৈশবের ডিজাইনার মিচেল লির  বলেন-
‘আমরা সব সময়ই বাংলাদেশের আবহাওয়ার কথা মাথায় রেখে কাপড় বেছে নিই। গরমে শিশুদের পোশাকটা যেন আরামদায়ক হয়, তাই আমরা হালকা রঙের সুতি, লিনেন ও নরম গেঞ্জি কাপড়ের পোশাক তৈরি করেছি।’

কোথায় কেমন পোশাক পরবে শিশু—এ ব্যাপারে পরামর্শ দিলেন ফ্যাশন হাউস রঙ বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী সৌমিক দাস। তিনি বলেন- 
'গরমে পোশাকটি পরে যেন শিশু স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে, সেদিকে খেয়াল রাখা জরুরি। বাসার বাইরে ঘুরতে গেলে ছেলে শিশুদের জন্যে টি-শার্ট, হাফ হাতা শার্ট, পাতলা জিনস বা গ্যাবার্ডিনের প্যান্ট বেছে নিতে পারেন। মেয়েদের বেলায়  সুতি কাপড়ের ফ্রক বা শার্টের সঙ্গে থ্রি-কোয়ার্টার লেগিংস অথবা নরম জিনস, কুর্তির সঙ্গে ট্রেন্ডি পালাজো পরতে পারে অনায়াসেই।'

গ্রীষ্মকালের প্রচণ্ড গরম সবার জন্য কষ্টকর। বাচ্চারা খুব বেশি স্পর্শকাতর বলে তারা অনেক গরম আবহাওয়ায় সহজে খাপ খাওয়াতে পারে না। তীব্র গরমে শিশু নানারকম স্বাস্থ্য জটিলতার মুখোমুখি হয়। তাই বাবা-মার উচিত সব সময় তাদের যত্ন নিয়ে সচেতন থাকা। তবে শিশুদের জন্য যে ধরনের পোশাকই নির্বাচন করা হোক না কেনো, তা যেন খুব বেশি আঁটসাঁট না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। এবার ঈদে ঝুপঝাপ বৃষ্টি নেমে যাবার ভয় আছে। তাই কোথাও যাবার সময় ব্যাগে শিশুর জন্যে বাড়তি জামা নিয়ে নিবেন অবশ্যই।

ঈদ মানেই আনন্দ, ঈদ মানেই খুশি। এই খুশির মাঝে ঘরের ছোট্ট শিশুটির প্রতি অধিক সচেতন হতে হবে পরিবারের সবাইকে। ডা. সালমা বিনতে রহমান ও মোহাম্মদ ইব্রাহিম খলিল এফসিএ এর একমাত্র সন্তান ওমেরা ফাতিমা ইব্রাহিম। সন্তানকে নিয়ে প্রথম ঈদ তাদের। ঈদ ও ঈদ আয়োজনে ডা. সালমা বিনতে রহমান বলেন-

'গত ঈদের মাত্র ২১ দিন আগে আমাদের ঘর আলো করে ওমেরার জন্ম হয়। ছোট্ট বেবির দেখাশুনা যত্ন সিব মিলিয়ে একটা টেনশান কাজ করেছিলো। এখন ওর বয়স একবছর। ঈদের আনন্দ আমাদের অনেকটা। আল্লাহর রহমতে পরিবারের সবার সাথে ওমেরা ঈদ করবে। এখন বর্ষার সময় বলে একটু বেশি সচেতন হতে হচ্ছে আমাদের। বৃষ্টি হলেই ঠান্ডা, আবার পরক্ষনেই ভ্যাপসা গরম। বৃষ্টি আর গরমকে মাথায় রেখেই ওর জন্যে শপিং করেছি। শুধু শপিং নয়, ঈদের এই আনন্দ আয়োজনে অনেক অতিথিদের মাঝে ওর প্রতি আলাদা যত্ন নেয়ার কথাও ভেবে রেখেছি। যেহেতু আমরা দুজনই চাকরিজীবী, তাই ছুটির দিনগুলো একসাথে সবাই মিলেই কাটাবো। কোথাও বের হলে পরিবেশ, স্থান, সময় ভেবেই ওর জন্যে অতিরিক্ত পোষাক নিয়ে নিবো। গরমে বারবার চেঞ্জ করতে হতে পারে, সে বিষয় গুলো খেয়াল রাখতে হবে। পাশাপাশি ওর খাবারের প্রতি খুবই যত্নশীল হতে হবে। ঈদ উপলক্ষে সব বাসায় প্রায় সময় তৈলাক্ত খাবার হবে, সেসব থেকে ওকে দুরে রাখতে হবে। ওর উপযুক্ত খাবার সাথে নিতে হবে। পোষাকের দিকে ওর জন্যে সুতি ভয়েলের আরামদায়ক পোষাক নিয়েছি। কিছু জমকালো পোষাক নেয়া হয়েছে, আবহাওয়া বুঝে ঠাণ্ডা পড়লে সেগুলো পরাবো। সব মিলিয়ে ঈদের প্রস্তুতি ভালো।'

ওমেরার বাবা মোহাম্মদ ইব্রাহিম খলিল বলেন-
'পুরো একমাস রোজা পালনের পর ঈদ আসছে আনন্দের বার্তা নিয়ে। এবারের ঈদের আনন্দ কয়েকগুণ বেশি। গতবছর ঈদে ওমেরা ছিলো তবে, ও তখন পুরোই নবজাতক, সে জন্যে আনন্দের পাশাপাশি ওকে নিয়ে ভাবনা ছিলো অনেক। এবার  মেয়েকে নিয়ে ঈদ করবো। শপিং করা শেষ, ওর জন্যে আরামদায়ক হবে এমন পোষাক নিয়ে হয়েছে। ওমেরা ঈদের কয়েকদিন আমাদের দুজন সহ পরিবারের সবাইকে সারাক্ষণ পাশে পাবে, ওর যেমন আনন্দ নানু বাড়ির সবাই দাদু বাড়ির সবাই সহ ঈদ করবে, আমাদেরও তেমন আনন্দ। আল্লাহ চাহে ঈদের আগের দিন সাভারে যাবো মায়ের বাসায়। ব্যস্ততম জীবনে চাকরির জন্যে ঢাকায় থাকি, ঈদের ছুটিতে মা বাবা সবাই সহ ঈদ করার অপেক্ষা। সবাইকে অগ্রিম ঈদ মোবারক।'

* শিশুসাহিত্যিক

No comments:

Post a Comment

International