পিয়াজ আদর
মুহাম্মদ সেলিম রেজা
কদিন থেকেই মনটা খুব আনচান করছে। ভাবছি মেয়ের বাড়ি থেকে একটু ঘুরে আসবো। মেয়েটার বিয়ে দিয়েছি সেই রাজশাহী। চাঁপাই থেকে প্রায় ৫০ কিলো। কপালে লিখা ছিলো তাই হয়তো আল্লাহ অতদূরে একমাত্র মেয়ের বিয়ে দিতে গেলাম। কত ভালো ভালো সমন্ধ এলো, আশপাশে কত লোকে বললো- তোমার মেয়েটার বিয়ে কাছেই দাও, যখন মন চাইবে একটু দেখে আসতে পারবে। যাক এত ভেবে কাজ নেই। মেয়েটাকে দেখতে যাবে- ভাবছি কি নিয়ে যাব! আজকাল যা জিনিয়ের দাম বেড়েছে!!!
ও সায়েমা'র মা, আরে কই গেলা? এদিকে আসো দেখি!
বলছি- মেয়েটাকে দেখতে যাবো, কি নিয়ে যাই বলো দেখি?
- তা আমি কি আর বলবো! তুমি যা ভালো মনে করো তাই নিবা।
- না, বলছিলাম অনেকদিন পর যাচ্ছি। তা কি নিয়ে যাবো ভেবে পাচ্ছি না!
- বলছি, ক্ষেতের থেকে কিছু টাটকা সবজি নিয়ে গেলে হয় না! মেয়েটা কতদিন টাটকা সবজি খেতে পায় না। বাজার থেকে ভেজাল জিনিষ কিনে খেতে খেতে কবে জানি অসুখ করে।
- আরে--- এসব ভেবো না। আর ক্ষেতের থেকে সবজি নিয়ে গেলে জামাই আবার কি বলে!!!
- কি বলবে? টাটকা সবজি পেয়ে বরং খুশিই হবে। আর মিষ্টি নিয়ে নিবে।
- কথা খারাপ বলো নাই। কিন্তু--- আমি ভাবছি কি?
- কি আবার ভাবছো?
- না মানে- পেয়াজগুলো বেশ ভালো হয়েছে, আর বাজারে যে পিয়াজের দাম। এক বস্তা পিয়াজ নিয়ে গেলে কেমন হয়? জামাই বাবাজি খুশি হবে তো?
- বলো কি? এক বস্তা পিয়াজ পেলে কে খুশি হবে না? জামাই বাবার বাবাও খুশি হবে!!!
- সত্যি!! মেয়ের জন্য তাই করি।
ক্ষেত থেকে টাটকা পিয়াজ তুলে একটি বস্তায় ভরে চললাম জামাই বাড়ি। রাজশাহী নেমে জামাই কে মোবাইলে কল দিলাম। জামাই বাবাজি কল ধরেই
- আসসালামু আলাইকুম। আব্বা আপনি কোথায়?
- বাবাজি, রাজশাহী নামলাম..
- এ... পেয়েছি, দেখেছি, দাঁড়ান দাঁড়ান
- (পাশেই হয়তো দাঁড়িয়ে ছিল) আমাকে দেখে এগিয়ে এলো
- বাবা- এ বড় বস্তা কিসের?
- বাবা কিছু মনে করো না! ক্ষেতে পিয়াজ লাগিয়েছিলাম। তাই...
- (জামাই বাবাজি খুশি হয়ে) বলেন কি আব্বা!!! এক.... বস্তা..... পিয়াজ!!!
- বাবা তোমারে কষ্ট দিলাম.. আসলে তোমার শ্বাশুড়ি..
- না আব্বা না... আমি কষ্ট পাইনি (বলেই পিয়াজের বস্তা কাধে তুলে) চলেন আব্বা, আসেন
বাসায় ঢুকতে ঢুকতে জামাই চিৎকার করে-
- কই গো... আব্বা এসছে.. তাড়াতাড়ি এদিকে এসো
- (সায়েমা) সত্যি, (তড়িঘড়ি এসে)
- হ্যাঁ গো হ্যাঁ, দেখ কি নিয়ে এসেছে?
- এ বস্তায় কি?
- পিয়াজ.....
জামাই বাবাজির চিৎকারে বাড়ির সবাই জড়ো হয়ে গেল। অবাক হয়ে সবাই তাকিয়ে আমার দিকে চেয়ে আছে। এই বাজারে এক বস্তা পিয়াজ!!!
সায়েমার শ্বশুর-শ্বাশুড়ি তো বেজায় খুশি। তার দেওর, ভাসুর, ননদ, জা-জেঠি সহ সবাই হুলুসতুল করে দিচ্ছে সায়েমাকে। এ বলে তোমার বাবা তো সেই... নানান কথা।
আমার জন্য এবার স্পেশাল খাওয়া, বাজার থেকে জামাই নিজে পদ্মার ইলিশ মাছ নিয়ে এলো। শুনলাম সায়েমাকে বললো- কতদিন ভালোমত পিয়াজ দিয়ে ইলিশ মাছ খাইনি। বাবার ওছিলায় আজ মন ভরে খাব। মেয়েটাও রসিকতা করে কত কথাই বললো।
যাক, দুপুরে বেশ তৃপ্তি ভরে খাওয়া-দাওয়া করলাম। সন্ধ্যার আগে আগে চলে আসতে চাইলাম। সবাই তো আসতেই দিতে চাইছে না। বিহাই বিহাইন তো বলেই দিল-
- এতদিন পরে এসেছেন দু-চার দিন না থেকে গেলে হয়? থেকে যান ক'দিন
- না, না, বাড়িতে অনেক কাজ পড়ে আছে। আর জানেনই তো, একমাত্র মেয়ে আমার।
- তা বটে। তবে শীজন থাকতে আরেকবার আসবেন।
- হ্যাঁ, চেষ্টা করবো। আসি
জামাই বাবাজি সাথে এগিয়ে দিয়ে গেল। বাসে উঠিয়ে দিয়ে বিদায় নিলো।
বাসে বসে বাড়ি আসছি আর হঠাৎ ভাবছি-
ওরা কি আমাকে আদর করলো নাকি পিয়াজকে!!!
No comments:
Post a Comment