Jagrotobibek24

তথ্য, বিনোদন, সমাজ, বিজ্ঞান ও সাহিত্য সমৃদ্ধ একটি সুন্দর ব্লগ

Sponsored by: VINNOMATRA

GoRiseMe.com

Followers

Friday, 25 June 2021

মসজিদের ইমাম থেকে চেয়ারম্যান হওয়ার আশ্চর্য গল্প

 মসজিদের ইমাম থেকে চেয়ারম্যান হওয়ার আশ্চর্য গল্প







ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হলেন তরুণ আলেম
মুফতি হেদায়াতুল্লাহ খান আজাদী।
নেতৃত্ব চর্চায় আলেমরা : মাদরাসা, মসজিদ ও ওয়াজের মাঠের চিন্তাবৃত্ত থেকে বের হয়ে আসছেন সময়ের তরুণ আলেমরা। তারা নিজেদের মেলে ধরছেন সমাজের মূলধারায়। যুক্ত হচ্ছেন সাধারণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মিডিয়া, ব্যবসা, রাজনীতিসহ সামাজিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে। সাফল্যও পাচ্ছেন কেউ কেউ, আবার কেউ সুদূর গন্তব্যের পথে এগিয়ে যাচ্ছেন। আশা, একদিন সমাজের মূলধারায় একীভূত হয়ে সামাজিক নেতৃত্ব দেবেন।
আলেম যখন ইউপি চেয়ারম্যান : সমাজসেবার উচ্চ আকাঙ্ক্ষা নিয়ে এগিয়ে যাওয়া তরুণ আলেমদের একজন নন্দিত ইসলামী বক্তা মুফতি হেদায়াতুল্লাহ খান আজাদী। তিনি গত ২১ জুন ২০২১ অনুষ্ঠিত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বরিশাল সদর ৬ নম্বর জাগুয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে হাতপাখা প্রতীকে নির্বাচন করেন। একটি সুনির্দিষ্ট দলের প্রার্থী হলেও প্রায় সব ধারার ইসলামী রাজনীতিকরা তাঁকে স্বাগত জানিয়েছেন। তাঁরা মনে করছেন, এই আলেমের জয় দেশের তরুণ আলেমদের রাজনীতিমুখী হতে উৎসাহিত করবে।
মুক্তিযুদ্ধে দাদার অংশগ্রহণ : মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান মুফতি হেদায়াতুল্লাহ আজাদী শৈশব থেকেই ইসলামী রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। রাজনীতিতে তাঁর হাতেখড়ি হয় মুক্তিযোদ্ধা দাদার মাধ্যমে। সে অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন, ‘আমার দাদা মাওলানা আবদুর রশিদ একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। ১৯৭১ সালে তিনি ১১৭ জন হিন্দু সনাতন ধর্মাবলম্বীর জীবন রক্ষা করেন। শৈশবে দেখেছি, তিনি প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ঘুরে মানুষের খোঁজখবর নিতেন, তাদের সাহায্য-সহযোগিতা করতেন। কখনো কখনো ফজরের পর আমাকে সঙ্গে নিয়েও বের হতেন। মানুষের ভালো-মন্দ খবর নিতেন। এভাবে আমার ভেতর জনসম্পৃক্ততা ও জনসেবার একটি আগ্রহ তৈরি হয়। সে আগ্রহ থেকেই মূলত রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হওয়া।’
মাদরাসার শিক্ষক ও মসজিদের খতিব : মুফতি হেদায়াতুল্লাহ আজাদী জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলুম মাদরাসা থেকে দাওরা এবং জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলুম মাদানিয়া থেকে ইফতা পাস করেন। পেশাগত জীবনে তিনি একজন খতিব, শিক্ষক ও ইসলামী বক্তা। তিনি ঢাকার ধোলাইপাড়ের পুকুরপাড় জামে মসজিদের খতিব এবং ইসলামী একাডেমি বাংলাদেশ নামক একটি ইসলামী স্কুলের পরিচালক। এ ছাড়া একজন বক্তা হিসেবেও ইতিমধ্যে মানুষের আস্থা অর্জন করতে শুরু করেছেন।
বংশপরম্পরায় সাধারণ মানুষের সেবা : তবে পেশাগত জীবনের ব্যস্ততা মুফতি হেদায়েতুল্লাহ আজাদীকে কখনো জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন করতে পারেনি। তাঁর ভাষায়—‘জাগুয়ায় খান পরিবারের আগে থেকে একটি ঐতিহ্য আছে, আমার আব্বার নানা আল্লামা আবদুল মুয়িজ (রহ.) ছিলেন আল্লামা হুসাইন আহমদ মাদানী (রহ.)-এর বিশিষ্ট খলিফা, দাদা ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা ও সেনাবাহিনীর ধর্মীয় শিক্ষক, আমার আব্বাও একজন আলেম, আল্লাহর অনুগ্রহে বরিশাল অঞ্চলসহ সারা দেশে আমার একটা পরিচিতি আছে; কিন্তু আমি যখনই এলাকায় এসেছি মানুষের সঙ্গে মন খুলে মিশেছি। সব ব্যস্ততা পাশ কাটিয়ে সাধ্যানুযায়ী তাদের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছি, যা নির্বাচনের সময় আমার জন্য আশীর্বাদ হয়েছে।’
আলেমদের রাজনীতিতে অংশগ্রহণ : মুফতি আজাদী মনে করেন, সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে আলেমদের আরো বেশি রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হওয়া উচিত। কেননা যে মানুষের ভেতর আল্লাহভীতি ও সততা নেই, তার দ্বারা সমাজের কল্যাণ সাধন করা সম্ভব নয়। তাঁর কাছে জানতে চেয়েছিলাম, জনগণের আস্থার প্রতিদান তিনি কিভাবে দিতে চান? উত্তরে বলেন, ‘আমি মনে করি, একজন ইউনিয়ন চেয়ারম্যান সৎ ও আন্তরিক হলে এবং সরকারি দলের পক্ষ থেকে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা না হলে অনেক কিছু করার সুযোগ আছে। আল্লাহ যদি আমাকে সুষ্ঠুভাবে দায়িত্ব পালনের সুযোগ দেন, তবে প্রথমে জাগুয়ার রাস্তাঘাটের উন্নয়নে নজর দেব। সরকারি বরাদ্দ ও সেবাগুলো উপযুক্ত ব্যক্তির কাছে পৌঁছে দেব, মাদক ও সন্ত্রাস বন্ধের উদ্যোগ নেব এবং করোনাসহ নানা দুর্যোগে যেসব পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তাদের পাশে থাকার চেষ্টা করব।’ মুফতি আজাদী আশা করেন তাঁর দল, দলীয় কর্মীরা, এলাকার জনগণ নির্বাচনের আগে যেভাবে তাঁর ওপর আস্থা রেখেছে এবং সহযোগিতা করেছে, নির্বাচনের পরও তারা আন্তরিকভাবে পাশে থাকবেন। তিনি মহান আল্লাহ এবং তাঁদের সবার প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

No comments:

Post a Comment

International