Jagrotobibek24

তথ্য, বিনোদন, সমাজ, বিজ্ঞান ও সাহিত্য সমৃদ্ধ একটি সুন্দর ব্লগ

Sponsored by: VINNOMATRA

GoRiseMe.com

Followers

Thursday, 24 June 2021

এভাবে রিক্সাগুলো ভাঙবেন না

 এভাবে রিক্সাগুলো ভাঙবেন না

মোহাম্মদ অংকন





অটোরিক্সা বন্ধের প্রতিবাদে হঠাৎ কর্মহীন হয়ে পড়া রিক্সাওয়াদের আন্দোলনকে আমি সমর্থন করি। তারা যদি হরতাল ডাকে, তাতেও আমি সমর্থন করব। বরং অনুরোধ করব, তাদের হরতাল যেন কথিত লকডাউনের মতো না-হয়।
আমরা বিভিন্ন সময় টেলিভিশন, সোশ্যাল মিডিয়া ও প্রিন্ট মিডিয়াসহ স্বচক্ষে অটোরিক্সাওয়ালা, সাধারণ রিক্সাওয়ালাদের ওপর পুলিশের নির্যাতনের নির্মম চিত্র দেখে থাকি। সেইসব চিত্র দেখলে শরীর শিউরে ওঠে যেন পশ্চিম পাকিস্তানি সেই মিলিটারিরা বাঙালি শ্রমিকশ্রেণিকে শোষণ করছে। ইচ্ছেমতো নিপীড়িন-নির্যাতন করছে।



রিক্সাওয়ালারা প্রতিদিন চাঁদাবাজির স্বীকার হয়। কারা এই চাঁদা তোলে, তা সবাই জানে। তারপরও সবাই মুখ বন্ধ করে রাখে শুধুমাত্র পেটের দায়ে। প্রতিবাদ করলে রিক্সা তুলে নিয়ে যেতে পারে, রিক্সা ভাঙচুর করতে পারে এমন ভয় থাকে।
এখন আমার কথা হচ্ছে- অটোরিক্সা কী এমন ক্ষতি করে? ব্যাটারি চার্জের জন্য বিদ্যুৎ লাগে বলে বিদ্যুতের ঘাটতি হয়? কেন বাংলাদেশ না বিদ্যুতে স্বয়ংসম্পন্ন, তাহলে অটোরিক্সাওয়ালারা ন্যায্যমূল্য দিয়ে বিদ্যুৎ কিনে ব্যবহার করলে আপত্তি কীসে? না কি এর মধ্যে কিন্তু আছে?
অটোরিক্সাওয়ারা রাস্তায় যানজট বাঁধায়, এটা একটা কারণ হতে পারে। যানজট তো বাঁধবেই। যে সংকীর্ণ আর খানাখন্দে ভরপুর রাস্তা! আরেকটা কারণ হতে পারে, তারা দ্রুতগতিতে চালায় বলে মাঝেমাঝে দূর্ঘটনা ঘটে। এইসব কারণ কিন্তু ট্রাফিক পুলিশ কিছু নিয়ম বেঁধে দিলে, নিজেদের দায়িত্ব ঠিকঠাকভাবে পালন করলে-ই সমাধান করা সম্ভব। এজন্য অটোরিক্সাই বন্ধ করে দিতে হবে, এটা কেমন কথা? এ যেন- গেরস্তের সাথে না-পেরে গেরস্তের লাউগাছ টেনে ছেড়ার মতো।
রিক্সাওয়ালাদের সাথে না-পারার কিছু নেই। বরং তারাই পারে না। রিক্সার লাইসেন্সের জন্য ঘুরতে ঘুরতে পায়ের তলা ক্ষয়ে যায়। তাও কি মেলে? ঘুষ দিতে হয়। বেশি ফি দিতে হয়। প্রশ্ন হচ্ছে- যারা রিক্সাকে বৈধ করার কাজে এসির নিচে বসে আছেন, তাদেরকে বৈধ করার লাইসেন্স কে দিবে? সরকার তো দায়িত্ব পালন করার জন্যই নিয়োগ দিয়েছেন; কিন্তু তারা কী করছেন?



এবার আসি আসল কথায়। এইসব অটোরিক্সার জন্ম দেয় কারা? কারা দেশে অটোরিক্সা আমদানি করেন? নিশ্চয়ই ধনিকশ্রেণি যারা কি না শতো শতো টাকার কর ফাঁকি দেয়। তারা যখন এইসব অবৈধ জিনিস আমদানি বা তৈরি করে, তখন কর্তৃপক্ষ কেন নিষেধাজ্ঞা দিতে পারে না? না কি তাদের সাথে পেরে ওঠা কঠিন? এ যেন এই তামাকদ্রব্যের মতোই হল। তামাক সেবনকারীকে গ্রেফতার করা হবে আর তামাক উৎপাদনকারীর থেকে সর্বোচ্চ কর নিয়ে দেশ চালানো হবে। যে জিনিস অবৈধ, সেটির সহজলভ্যতা বাড়িয়ে মানুষকে কেন বিভ্রান্ত করা হয়, এটাই আমার মাথায় আসে না।
দেখুন, আপনারা যা করছেন, তা মোটেও ঠিক করছেন না। এই করোনাকালে নিম্নবৃত্ত মানুষগুলো দুবেলা ভাত খাওয়ার জন্য, ঋণ করে রিক্সা কেনা রিক্সার কিস্তি পরিশোধের জন্য রাস্তায় নামছে। তারা শুধু নিজের পরিবারের জন্য কাজে নামছে, তাও নয়, মানুষের সেবাও করছে।
অটোরিক্সা যদি সত্যই পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর হয়, বিদ্যুতের অপচয়ের কারণ হয়, কিংবা দূর্ঘটনা সৃষ্টি করে, তবে অটোরিক্সা বন্ধ করা হোক; কিন্তু অবশ্যই এইসব রিক্সাশ্রমিকের পূর্নবাসন আগে করতে হবে। যে অটোরিক্সাটি ভেঙ্গে ফেলা হচ্ছে, তা সম্পদের অপচয়ই শুধু নয়, শ্রমিকের কষ্টের টাকায় কেনা স্বপ্নকে দুমড়ে-মুচড়ে মেরে ফেলা হচ্ছে যা অপশাসনের বর্হিঃপ্রকাশ।
তাই অটোরিক্সা ভাঙার আগে বিকল্প রিক্সার ব্যবস্থা করে দিন। বিকল্প আয়ের উৎস করে দিন। আপনাদের হাতে ক্ষমতা আছে, সুযোগ আছে, আপনারা যদি সেসবের অপব্যবহার করেন, তবে আপনারা যে লেখাপড়া করে সাহেব হয়েছেন, এর কি কোনো দাম থাকলো? একটু বুদ্ধি খাটান, পলিসি খাটান দেশ ও দেশের মানুষের কল্যাণের জন্য, ক্ষমতা হাতে নিয়ে যা ইচ্ছে তাই করবেন না।
আর রিক্সাওয়ালা ভাইদের বলছি, আপনারা আন্দোলন করুন। তবে রাষ্ট্রের যেন কোনো ক্ষতি না-হয়। কোনো ভাঙচুর করবেন না। তা যদি করেন, আমাদের কথা বলার মুখ থাকবে না। আপনাদের দাবি-দাওয়া কিংবা সমাধানের পথ সরকারকে জানান। মিডিয়ার সামনে আপনাদের কথা তুলে ধরুন। একটা সমাধান নিশ্চয়ই পাবেন।
ঢাকা



তরুণ লেখক, কলামিষ্ট, কবি ও ইউটিউবার
মোঃ অংকন এর ফেসবুক থেকে সংগ্রহিত

No comments:

Post a Comment

International