অবলম্বন চাই
অ্যাড মো. আফাজুল হক, বীরমুক্তিযোদ্ধা
অ্যাড মো. আফাজুল হক, বীরমুক্তিযোদ্ধা
বন্ধুর সহধর্মীনীর সাথে মুঠোফোনে আলাপ। স্মৃতি চারণের সংগে যোগ হলো অনুযোগ।
বললাম, ‘কি ব্যাপার ভাবী? আলাপ করা যাচ্ছে না কেন?
তিনি বললেন ‘একই অভিযোগ আমারো, আপনাকে রিং করে পাই না।’
আমি বললাম, কি বলবো ভাবী, আইন পেশা এত কঠিন, অবসর বলতে কিছু নেই। অনেক আপনজনদের সংগেও দীর্ঘ দিন আলাপ হয় না।
কথাটা ঠিক। এই যে আমি। আপনার বন্ধুর মৃত্যুর পর ব্যস্ততা বহু গুণ বেড়ে গেছে। এর মধ্যে ৬টি উপন্যাস প্রকাশ করেছি। রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ততা আছে। একজন রোটারিয়ান। জীবীকার জন্য কোচিং সেন্টার চালাই। প্রতি বৎসর বইমেলায় স্টল দিয়ে বই বেচা কেনার কাজে অংশগ্রহণ করি।
আমি বললাম ভাবী, এবার কি বই বের করলেন?
ভাবী জবাবে বললেন, না এখনো হয় নাই। তবে প্রকাশকেরা খুব তাড়া দিলেও উপন্যাসের শেষ অংশটা আটকে গেছে।
আমি বললাম, এটা এমন কি শক্ত কাজ। আপনি উত্তরায় থাকেন, নায়ককে বড়জোর টংঙ্গী ব্রীজের উপর নিয়ে যাবেন। নায়ক টংঙ্গী ব্রীজের বাম পাশ দিয়ে উত্তর দিকে হাঁটবে, ঠিক ব্রীজের মাথায় পিছন থেকে আসা একটি গাড়ি ধাক্কা দিয়ে নায়ককে মাটিতে ফেলে দিয়ে চালক গাড়ি নিয়ে চম্পট দিবে। পথচারীরা দূর্ঘটনা কবলিত টগবগে যুবককে ক্যাপ্টেন মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে নিয়ে গেলে ডাক্তার মৃত ঘোষণা করে।
নায়িকা হেলেনা এসবের কিছুই জানে না। বহু ফোন করেও যোগাযোগ না হওয়ায় রেগে আগুন হয়ে আছে। হেলেনার প্রেমিক আপনার উপন্যাসের নায়ক, আপেলের সাথে পরবর্তীতে দেখা হলে কিভাবে যে রাগ ঝাড়বে, তার প্রস্তুতি নিতে থাকে। ২৪ অক্টোবর ২০১৭ আপনার উপন্যাসের নায়িকা হেলেনা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে টিএসসি চত্ত্বরে তার প্রেমিককে খুঁজে। এক ঘন্টা, দুই ঘন্টা, তিন ঘন্টা, নাহ কোথাও নেই আপেল। হঠাৎ দেখা হয়ে যায়, আপেলের ঘনিষ্ঠ বন্ধু মোটাবাবুর সাথে।
মোটাবাবু বললো, কিরে হেলেনা, আমার বন্ধুর মৃত্যুর খবর পেয়েছিসতো?
হেলেনা অবাক দৃষ্টিতে মোটাবাবুর দিকে তাকালো। বললো, হেয়ালী কেন করছো মোটাবাবু। তোর দেহটা যেমন মোটা, মাথাটাও কি মোটা? একজনের মৃত্যু নিয়ে হেয়ালী করতে পারিস তুই?
মোটাবাবু বললো, কি! তুই জানিস না? আপেল ৩দিন আগে টংঙ্গী ব্রীজের উপর দূর্ঘটনায় মারা গেছে।
হেলেনা শুনে বাগরুদ্ধ হয়ে গেল। কি বলবে, ভেবে পাচ্ছে না। তবুও মোটাবাবুকে অনুরোধ জানালো, ঘটনাটা ক্লিয়ার করতো। দূর্ঘটনার ব্যাপারটি নাতিদীর্ঘ বললে, হেলেনা ওড়না দিয়ে চোখ ঢাকলো। এত মানুষের সামনে ডুঁকরে কাঁদতেও পারলো না। উল্টোদিকে মুখ করে দৌঁড়ে পালিয়ে গেল।
আমি বললাম ভাবী, আপনার উপন্যাসটি এভাবেই শেষ করলেই হয় না? তাহলেইতো তাড়াতাড়ি প্রকাশককে পান্ডুলিপিটি দেয়া যায়। ভাবী হো হো করে হেঁসে দিলেন। বললেন, আমার উপন্যাস তাড়াতাড়ি প্রকাশের জন্য নায়ককে মেরে ফেললেন? তাহলেতো আপনার কাছে আরেকটি আবদার, নায়িকার যে একটি অবলম্বন চাই।
আমার এই গল্পটি নিছক গল্প নয়। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন রাস্তায় বহু লোক দূর্ঘটনায় প্রতিদিন এভাবেই মারা যাচ্ছে। ইলিয়াস কাঞ্চনের নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনটি দূর্ঘটনা কমাতে পেরেছে কিনা জানি না, তবে এটা যেন আমাদের নিয়তি। ধন্যবাদ ভাবী, আমার এই গল্প মনোযোগ সহকারে শোনার জন্য। তাই বলে আপানার উপন্যাস শেষ করার জন্য আমার এই গল্প প্লিজ কাজে লাগাবেন না। একজনের মৃত্যু, পুরো পরিবারের কান্না। এমনকি প্রেমিকার কান্না, আমাদেরও কাঁদায়। এটা যেন না হয়।
লেখক: আইনজীবী ও কথাসাহিত্যিক
No comments:
Post a Comment