রাজধানীর উত্তরখানে সাংবাদিক মাহমুদুল হাসানের উপর বর্বর হামলা
বিশেষ প্রতিনিধি: রাজধানীর উত্তর খানে সাংবাদিক মাহমুদুল হাসান মোয়াজ্জেম এর বর্বর হামলা
ও আসামী গ্রেপ্তার না হওয়ায় ক্ষোভে ফুসছে পুরো দেশের সাংবাদিক
সমাজ। গত ২৮ আগষ্ট রাত ৮: ৩০ মিনিটে উত্তরখানের দোবাদিয়া মোল্লাবাড়ী
এলাকায় সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে বিএনপি-জামায়াত
পন্থী শীর্ষ সন্ত্রাসীরা হামলা চালিয়ে গুরুতর জখম করার পর ১১:৩০ মিনিট
পর্যন্ত স্থানীয় মোল্লাবাড়ী জামে মসজিদে আটকে রাখে। এ সময় সাংবাদিক
পরিচয় পাওয়ার পরও স্থানীয় কেউ তাকে সহযোগিতা করতে এগিয়ে আসেনি।
উল্টো স্থানীয় মেম্বার মাহবুব আলম ও আমজাদ মোল্লাহর পরামর্শে তাকে
অপহরনকারী সাজিয়ে থানায় সোপর্দ করা হয়। ঘটনাস্থলে পুলিশ এসে মাহমুদ
কে নিয়ে থানায় পৌছানোর পূর্বে হামলাকারী শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী
দেলোয়ার ওরফে বাগের দেলোয়ার অপহরণ মামলা করতে তৎপরতা চালায়, কিন্তু
মাহমুদুল হাসানের পরিচয় জানার পর উত্তরখান থানার ওসি তাৎক্ষণিক এএসআই
রাছেল কে টঙ্গি হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা শেষে, সাংবাদিকের পক্ষ
থেকে মামলা গ্রহনের নির্দেশ দিলে অটোরিক্সা যোগে অর্ধেক রাস্তা
যাওয়ার পর, ওসির নির্দেশে মাহমুদ কে রেখে চলে যান এএসআই রাছেল ।
গুরুতর জখমী মাহমুদ আজম পুর হতে হেটে আব্দুল্লাহ পুর পৌছলে সাংবাদিক
আমান দম্পতী ও মানবাধিকার কর্মী দিল মোহাম্মদের সহায়তায় টঙ্গি
হাসপাতালে পৌছেন। পরের দিন পুলিশ কেস সার্টিফিকেট নিয়ে উত্তরখান
প্রায় ৪০/৪৫ জন সাংবাদিক উপস্থিত হয়ে ৬ জনকে চিন্থিত ১০/১২ জনকে
অজ্ঞাত নামা আসামী করে অভিযোগ দায়ের করেন মাহমুদুল হাসান। তবে মামলা
রেকর্ড ভূক্ত না করে গত ১ তারিখ থানায় বিষয়টি সুরাহার চেষ্টা চালায়
স্থানীয় সাবেক ছাত্রলীগ নেতা নাসিম সরকার ও উত্তরখান থানা আওয়ামী লীগ
সভাপতি ও ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান,কামাল উদ্দিন। এ সময় কামাল
চেয়ারম্যান, মামলার আসামী মাহবুব আলম মেম্বার ভাল লোক ও তাকে আসামী না
করার অনুরোধ জানান, সাংবাদিকর তা অস্বীকার করলে, ক্ষুব্দ চেয়ারম্যান
তীব্র ক্ষোভ নিয়ে থানা হতে বেরিয়ে যান। ওসি তৎক্ষণাৎ মামলা রেকর্ড
করার নির্দেশ দেওয়ার পরও, দলীয় প্রভাবের কারনে মামলা রেকর্ড করা সম্ভব
হয়নি।২তারিখ ওসি মামলা রেকর্ড সম্পর্কে সাংবাদিকদের জানান," মামলার
এজাহারে আঘতের ধরন, ও আঘাতের মাত্রা জানার জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে
চিঠি পাঠিয়েছে, চিকিৎসা পত্র পাওয়ার সাথে সাথে মামলা রেকর্ড করে
আসামী গ্রেপ্তার করবো। উত্তরখান থানার ওসি হেলাল উদ্দিন,হামলাকারী পক্ষ
হতে মোটা অংকের টাকা নিয়ে, দুই মাসেও থানায় মামলা রেকর্ড ভূক্ত
করেননি।
ওসির এমন প্রত্যারণামূলক আচরন ও টাকা খেয়ে মামলা রেকর্ড না
করায়," দ্রুত ওসি হেলালের প্রদত্যাগ দাবী করেছেন, সাংবাদিক সংগঠন গুলো । এ দিকে বৃহত্তর উত্তরাসহ এমন বর্বর হামলার প্রতিবাদে
ক্রমেই ফুসে উঠছে সাংবাদিক সমাজ। ঘটনাার দিন রাতেই মারাত্নক জখমের
শিকার মাহমুদুল হাসান মোয়াজ্জেমের উপর হামলার ছবিটি সামাজিক
যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পরলে, হাজার হাজার লাইক ও বিচার চেয়ে
কমেন্টেস ভরে যায়। পরের দিন, বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক ও অনলাইনে
শিরোনাম হয়," উত্তরখানে সাংবাদিকের উপর বর্বর হামলা"। আসামীরা দলীয়
লেবাস লাগিয়ে দিব্যি এলাকায় ঘুরে বেড়লেও, প্রশাসনের কোন মাথা ব্যথা
নাই। বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ বিবৃতিতে বলেন, " আইনগত ব্যবস্থা
গ্রহন করা না হলে, সারা দেশে এ আন্দোলন তীব্র থেকে তীব্রতর হবে "।
সাপ্তাহিক পত্রিকা পরিষদ সাধারণ সম্পাদক ও অপরাধ বিচিত্রার প্রকাশক
সম্পাদক, এসএম মোরশেদ জানান," মাহমুদুল হাসান অপরাধের মোটিভ
উন্মোচণে জাতির বৃহৎ কল্যাণে, নিজের জীবন বাজি রেখে কাজ করে
চলছে, তার উপর হামলা সমস্ত সাংবাদিকদের উপর হামলা, আমরা বিচারহীনতার
সংস্কৃতি চাইনা। প্রয়োজনে রাজপথে নামতে বাধ্য হবো"। এ দিকে
মাহমুদুল হাসানের শারিরীক অবস্থার উন্নতী হলেও, মাথার প্রচন্ড আঘাতে
বাম চোখ অনেকটা ক্ষতি গ্রস্থ বলে কর্তব্যরত চিকিৎসক জানান। মাহমুদুল
হাসান দির্ঘ বছর ধরে শত শত অনুসন্ধানী সংবাদ প্রকাশ করলেও, তার সঠিক
মূল্যায়ন করেনি গণমাধ্যম। ২০১৪ সালের মে মাসে তাকে অপহরণ ও চরম
নির্যাতন করা হলেও, রাষ্ট্রের গণমাধ্যম গুলো ছিল নিরব ভূমিকায়। ২০১৩
সালের ১৭ জানুয়ারী তার গ্রামের বাড়ি শ্রীনগরে সন্ত্রাসী হামলার শিকার
হন, তার বিরুদ্ধে করা হয় একাধিক মিথ্যা মামলা। ২০১৭ সালের কোরবানীর তিন
দিন আগে ভোয়া অভিযোগে তাকে গ্রেপ্তার করে দক্ষিণখান থানা-পুলিশ।
একের পর এক হামলা আর মিথ্যা মামলার শিকার হলেও, ক্ষোদ গণমাধ্যম কর্মীরা
ছিল নিরব। কিন্তু বর্তমানে সব সংগঠন গুলো মাহমুদুল হাসানের ন্যায়
বিচারের দাবীতে সোচ্চার। মাহমুদ ক্ষুরধার লিখনীর পাশা পাশি দক্ষ
সংগঠকও। তিনি ২০১৪ সালে বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টাস সোসাইটি গঠন
করেন। ২০১৫ সালে সাপ্তাহিক ,উত্তরা বাণীর প্রকাশক ও সম্পাদক এসএম
তোফাজ্জ্বল হোসেন (বীর মুক্তিযোদ্ধা ) কে নিয়ে একটি শক্তিশালী
সাংবাদিক সংগঠন করেন। রাজনৈতিক কারনে অপহরণের পর তা ভেঙ্গে গেলে,
উত্তরখান-দক্ষিণখান প্রেস ক্লাব গঠনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। ২০১৭
সালে ঢাকা বিমানবন্দর জার্নালিষ্ট এসোসিয়েশন গঠন করেন। ২০১৪ সালে
বুহত্তর উত্তরা ও টঙ্গির সাংবাদিকদের ঐক্যের বন্দনে আবদ্ধ করে গড়ে
তুলেন, ঢাকা উত্তর প্রেস ক্লাব। তার অক্লান্ত পরিশ্রম আর চেষ্টার ফলে
সাংবাদিকরা অনেকটা ঐক্যের ভিত্তি রচনার পাশাপাশি, সাংবাদিকতার
লেবাস ধারীদের বিরুদ্ধে সামাজিক সচেতনতার সাথে সাথে প্রায় শতাধিক
সংবাদ প্রকাশ করেন। উত্তরায় অপসাংবাদিক মুক্ত করার মূল নায়ক, মাহমুদুল
হাসান। সাংবাদিকদের দুঃসময়ে ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে বরাবরই তার কন্ঠ
সোচ্চার ও সরব।
No comments:
Post a Comment