স্মৃতি মানেই পেছনে ফিরে তাকানো
নূরহাসনা লতিফ
স্মৃতি শব্দের আভিধানিক অর্থ পুনরাবৃত্তি। মনে মনে অতীত বিষয়ের অনুশীলন। মনে রাখবার ক্ষমতাও। বিধা্তা শুধু মাত্র মানুষকেই এই স্মৃতি ধরে রাখবার ক্ষমতা দিয়েছেন। পৃথিবীতে কত শত ঘটনা ঘটছে আবার নদির স্রোতের মত তা মিলিয়েও যাচ্ছে। কোন কোন মানুষ সেসব ধরে রাখছে
স্মৃতিতে । এখানে মানুষের
স্মরণশক্তি কাজ করে। বিশেষ করে লেখার ব্যপারটা বেশি আসে স্মৃতি থেকে। যে স্মৃতি মনের
বালুচরে সুন্দর করে সাজিয়ে রাখতে পারে সেই সুন্দর করে লিখতে পারে। মেধা কাজ করে স্মৃতির
সাথে । লিখতে গেলে অভিজ্ঞতার প্রয়োজন হয়ে পড়ে। সেটাও কিন্তু স্মৃতি। অনেকের
ডায়েরি লেখার অভ্যাস আছে। এও স্মৃতি সংরক্ষনের আধার। দৈনিক পত্রিকা আর ডায়েরি মিলেই
ইতিহাস লেখা যায়। আসলে এক কথায় বলা যায় স্মৃতি মানে অতীতের কাহিনী। তবে লেখার প্রচলন
না থাকলে স্মৃতি ধরে রাখা সম্ভব হোতনা। এও ঠিক অনেক অনেক স্মৃতি হারিয়ে যায় না
লেখার কারণে। মানুষের জানার পরিধি যেমন বেশি তেমনি অভিজ্ঞতার কমতি নেই। কিন্তু সবটাই স্মৃতিতে ধরে
রাখা সম্ভব নয়। মনে হয় সিংহ ভাগ ঘটনা মানুষ ভুলে যায়। সুখের স্মৃতি, দুঃখের স্মৃতি মানুষ ভেতরে রাখার চেষ্টা করে। মানুষের
জীবন ভ্রাম্যমান। এক জায়গায় থাকা হয় না । অনেকের জীবনেই আছে ছোট বয়সের শহর অথবা
গ্রাম এর স্মৃতি। এসবের স্মৃতি অনেক। সেই সময়কার বন্ধুত্ব আসেপাশের সমাজ কোনটাই
ভোলার নয় নোবেল বিজয়ী মো ইয়ান শৈশব, কৈশোর
কাটিয়েছেন গ্রামে। পরবর্তিকালে তার স্মৃতি ও অভিজ্ঞতা সাহায্য
করেছে নোবেল বিজয়ী হতে । এবারের
বিশ্বকাপ তারকা মি্ড ফিল্ডার ইভান রাকিতিচের বেলায় লজ্জাকর স্মৃতি কাজ করেছে। ২০১৪
সালে রায়ভাল্কানতে একটা পেনাল্টি মিস করে ছিলেন রাকিতিচ।তার
শাশুড়ি ওকে একটা পোষা কুকুরের ছবি পাঠিয়ে বলেন, এই কুকুর ভাল পেনাল্টি নিতে পারে।
ভীষন লজ্জা পান শুরু করেন পেনাল্টি নিয়ে পরিশ্রম। তার অধ্যবসায় কাজে লাগে সাফল্যের
মুখ দেখেন এ সাফল্য দিয়েছে স্মৃতি। স্মৃতি
কি নাদেয় শ্রেষ্ঠ বন্ধুর নিদর্শন বাংলাদেশের ফারাজ। তাকে ঘিরেই গড়ে ওঠেছে ফারাজ
স্মৃতি কেন্দ্র। সাভারে পক্ষাঘাতগ্রস্তদের পুনর্বাসন কেন্দ্রে[ সি আর পি ] স্থাপিত ফারাজ হোসেন সেন্টারের ভেতরে ‘ফারাজ বৃক্ষ ছায়া” হয়ে থাকবে।এখানে স্মৃতি
মহৎ উদ্দেশ্য সাধন করছে। আবার স্মৃতি
মাঝে মাঝে নিকৃষ্ট চিন্তাধারা এনে দেয়। যেমন নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের থেকে কেউ
শিক্ষিত হলে লোকে্রা যেন তাকে অপমান করার
সুযোগ খোজে। অনেককে বলতে শোনা যায় অতীত ভুলে যেওনা। সাহিত্যএক রকম স্মৃতির দেখা
পাওয়া যায় যেমন রবীন্দ্রনাথের হৈমন্তি, নিরুপমা, লাবন্য। জীবনানন্দের বনলতা।এই
স্মৃতিকে ঘিরে শিল্পী সুশান্তের ক্যানভাসে ফুটে ঊঠেছে সাহিত্যের নারীরা। শুধু
সাহিত্যে নয় ইতিহাসের নায়করাও স্মৃতির মানুষ।টিপু সুলতান, সিরাজদৌল্লাহ।
বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের
নীতিমালা প্রনয়ণ করা হয় স্মৃতি
ঘেটে। পুরাতনের সাথে জুড়ে দেয়া হয় নতুন
কিছু নীতি। এখানে স্মৃতির প্রয়োজন আছে কারণ শূন্য থেকে কাজ করা কঠিন। এগুলো
প্রতিষ্ঠান ভিত্তিক স্মৃতি। সামাজিক রীতি
নিয়েও স্মৃতি আছে। পারিবারিক প্রথা প্রচলিত হয় স্মৃতি নিয়ে। ছেলে মেয়ের বিয়ে আকিকা জন্ম দিনে অতীতকে তুলে
ধরা হয়, এখানেও স্মৃতি কাজ করে। মা যেভাবে
একদিন বউ হয়ে পরিবারে এসেছেন তেমনি করেই
তার ছেলের বউকে ঘরে আনেন। তেমনি ভাবেই শিখিয়ে দেন সংসারের কাজ কর্ম। মানে স্মৃতি নিয়েই সাংসারিক গতি ধারা চলে যায়
ক্রমানন্বয়ে । অনেককে বলতে শো না যায় এপরিবারের নিয়ম এরকম। এখানেও স্মৃতি ধরা
দেয়। এমনকি পরিবারের ব্য়স্ক লোকেরা নাফেরার দেশে চলে গেলেও তার আদর্শ জীইয়ে থাকে
তার পরিবারে।সেভাবেই প্রজন্মের পর
প্রজন্ম চলতে থাকে। আমাদের চলমান জীবনে স্মৃতির গুরুত্ব অনেক।সৃজনশীল কাজের মধ্য
দিয়ে লেখক চিত্র শিল্পী, সংগীত শিল্পী কথক, নৃত্যশিল্পী অতীতের স্মৃতি ধরে রাখে। অতীতের স্মৃতিই আমাদের প্রবাহিত জীবনের ভীত। একে অবলম্বন করেই এগিয়ে
চলে জীবনের শাখা প্রশাখা। সাধারণভাবে চিন্তা করলে মনে হয় স্মৃতি কিছুইনা অথচ
স্মৃতিই সব। মনে হয় আদিম যুগে স্মৃতি তেমন কাজ করতোনা। সংসার, সমাজ গড়ার পর থেকেই
মানুষ স্মৃতি সংরক্ষণ করতে শিখেছে। স্মৃতির যে কত অবদান তা বলে শেষ করা যাবে না।
অতীত মানেই স্মৃতি। এর কাজ অনেক। স্মৃতি আনন্দ দেয়, স্মৃতি কষ্ট দেয়, শিক্ষাও দেয়
স্মৃতি । কাজ করে সে গোপনে। এ না থাকলে মানুষ
অন্য প্রানীর মত হয়ে যেত। বুদ্ধিসম্পন্ন কোন কাজ করার ক্ষমতা থাকতো না। জ্ঞানপিপাসু মানুষ স্মৃতির কদর
করে। স্মরণক্রিয়ার মাধ্যমে স্মৃতি জীইয়ে রাখে। স্মৃতি তাই মানুষের জীবনে অমূল্য
উপাদান।
লেখক: কথাসাহিত্যিক
No comments:
Post a Comment