Jagrotobibek24

তথ্য, বিনোদন, সমাজ, বিজ্ঞান ও সাহিত্য সমৃদ্ধ একটি সুন্দর ব্লগ

Sponsored by: VINNOMATRA

GoRiseMe.com

Followers

Thursday 16 August 2018

তামান্না তাবাসুম- আলমগীর হোসেন তারা

তামান্না তাবাসুম
আলমগীর হোসেন তারা




বাস চলছে। চেয়ার কোস। পুরা বাস ভর্তি, কোন ছিট খালী নেই। শুধু আমি যে সিটে বসে আছি তার পাশের সিটটা খালি। আমি রংপুর থেকে পাবনা যাচ্ছি। মনের সুখে মোবাইলে ফেইজবুক চালাচ্ছি। বাস দ্রুত গতিতে চলছে। সময় দ্রুত বয়ে যাচ্ছে আমি তেমন একটা টের পাচ্ছি না। কখন যে বগুড়া এসে গেছি টেরই পাইনি। 

বাস বগুড়া থামতেই অপূর্ব সুন্দরী একটা মেয়ে বাসে উঠলো। আসে পাশে তাকিয়ে, কোথাও সিট খালী না পেয়ে আমার পাশে এসে বসলো। আমি আর চোখে মেয়েটাকে দেখলাম সত্যি খুবই অপূর্ব। মেয়েটাও মাঝে মধ্যে আরচোখে আমাকে দেখছে তা আমি বুঝে গেলাম। 

আগ বাড়িয়ে কোন মেয়ের সঙ্গে কথা বলা এটা আমার অবিধানে নেই। আমি ছোট বেলা থেকেই মেয়েদের এরিয়ে চলতাম। কোন মেয়ের সঙ্গে সংকচে তেমন কথাই বলতাম না। অনেক ক্লাস মেডই আমাকে অহংকারী, ভিতু, ইত্যাদি উপাধিতে ভুষিত করেছে। আমি তবুও কারো কথায় কোন কর্নপাত করতাম না। 

পাশের মেয়েটা অকারনে হাত নারাচাড়া করছে। কখনো ওড়না ঠিক করছে, কখনো বা মাথার চুল। বারবার তার হাত আমার শরীর স্পর্স করছে। তার হাতের স্পর্সে আমার শরীরের মধ্যে শিহরন জেগে উঠছে। তবুও আমি স্থির থেকে মোবাইলে ফেসইবুক চালিয়ে যাচ্ছি। মেয়েটা বারবার মোবাইলের  স্কিনের দিকে লক্ষ্য করছে। এক সময় মোবাইল চালানো বন্ধ করে, সেটি পকেটে রেখে দিলাম। আমি ইচ্ছে করলেই জানতে চাইতে পারি, কোথায় যাচ্ছে, কোথায় থাকে, ইত্যাদি। কিন্তু আমি সে সবের কিছুই করছি না। 

একসময় ঘুমের ভাব করে সিটে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে রইলাম। এভাবে অনেকক্ষণ থাকার পর কখন যেনো আমার ঘুম চেলে আসে টের পাই না। যখন ঘুম ভাঙ্গে তখন লক্ষ করি, আমার কাধের সঙ্গে মাথা রেখে মেয়েটা দিবী ঘুমাচ্ছে। 

নিজের কাছে নিজের খুব ভালো লাগছে। নিজেকে অনেক গর্বিত মনে হতে লাগলো। আঃ কি সুন্দর অপূর্ব একটা মেয়ে আমার কাধে মাথা রেখে ঘুমাচ্ছে। নিজে না নড়ে শুধু চোখ ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে মেয়েটাকে ভালো ভাবে দেখতে লাগলাম, কি অপূরূপ।

আশে পাশের সিটের দিকে লক্ষ্য করলাম, একি অনেকেই আমাদের কে ফলো করছে। হায় হায় একি কারবার। পিছন সিটের দিকে লক্ষ্য করতেই আমি একটু নড়ে উঠলাম। সঙ্গে সঙ্গে মেয়েটার ঘুম ভেঙ্গে গেলো, সোজা হয়ে বসলো। মনে হলো সে লজ্জা পেয়েছে। লজ্জবতী লাজুক মেয়ে।

বন্ধুদের কাছে শুনেছি, এরকম হলে তারা নাকি মেয়ের সঙ্গে সেই রকম ভাব জমাতো। কয়েক ঘন্টার মধ্যে প্রেম হয়ে, শারীরিক স্পর্স পর্যন্ত- গড়াতো। কিন্তু আমার বেলায় কিছুই হলো না। হঠাৎ মেয়েটা বাহিরের দিকে তাকালো, এবং সঙ্গে সঙ্গে উঠে দাঁড়ালো, চলতে লাগলো বাসটির দরজার দিকে। আমি তো হাবার মতো তাকিয়ে রইলাম মেয়েটার দিকে। বাস থাকলো এবং মেয়েটা আস্তে করে নেমে পরলো।

নিজেকে নিজেই খুব বোকা ভাবতে লাগলাম। এমন ছেলেও আছে বর্তমান জামানায়? যদি মেয়েটার ফোন নাম্বারটাও নিতে পারতাম তবে কতইনা ভালো হতো। যাকে ইচ্ছে করলেই ধরা যেতো সে এখন কতো দুরে। ইচ্ছা করলেই যার সঙ্গে কত কথাই না বলা যেতো, এখন বা কোন কালেই কি তা আর সম্ভব। নিজেকে খুব অপদার্থ মনে হতে লাগলো। বাস চলতে লাগলো কিন্তু আমার মনের  মধ্যে থেকে সেই মেয়েটার স্মৃতি বিজরিত মুখ খানা ভেসে উঠতে ছিলো। 

মেয়েটার কাহিনী এখানেই সমাপ্ত হতে পারতো, কিন্তু' না, দিন কেটে গেলো, রাতে বিছানায় গিয়ে ঘুমোনো আগে ফেসইবুক চালতে ইচ্ছে হলো। ফেসইবুক অন করতেই দেখলাম একটা ফ্রেন্ড রিকয়েস্ট, একটা মেয়ের ছবি, তামান্না তাবাসুম। কে আবার এই মেয়ে। ভূয়া আইডি নয়তো? তার ডিটেন্সে গিয়ে প্রথমে ফটোতে কিক করলাম, একের পর এক ছবি আসতে লাগলো, ছবি দেখেতো আমি অবাক, একি কান্ড, এটাতো সেই মেয়ে যে বাসের মধ্যে আমার পাশের সিটে বসে এলো। ওকি করে আমার ফেইসকুরের সন্ধান পেলো। পরনেই মনে পরলো, আমি যখন ফেইসবুক চালাচ্ছিলাম তখন ও সেদিকে তাকিয়ে ছিলো। মনে হয় নাম দেখে নিয়েছিল। পরে সার্চ করে আমাকে পেয়েছে। মেয়েটার মাথায় বুদ্ধি আছে বলতে হবে। । থ্যাংকস লিখে ইনবক্সে একটা মেসেজ পাঠালাম। উত্তর এলো-
-আপনাকেও ধন্যবাদ। 
আমি লিখলাম 
-আপনাকে এভাবে পাব ভাবতেও পারিনি?
- আপনি এত বোকা কেন? নাকী অহংকারী?
- দুটোর কোনটাই আমি নই। 
- তবে কথা বললেন না কেন? 
- সংকোচে। 
- এ যুগের ছেলে আবার......
এভাবেই চলতে লাগলো আমাদের ফেসইবুকে মেসেজ আদান প্রদান, তার পর ছবি আদান প্রদান। তার পর কথা বলা, প্রথমে মিনিট -মিনিট, পরে ঘন্টা-ঘন্টা। আমাদের সম্পর্ক আপনি থেকে তুমিতে নেমে এসেছে। প্রথমে পরিচয় তারপর আস্তে আস্তে প্রেম ভালবাসায় রূপ নিয়েছে। আমরা এখন স্বপ্ন দেখি আগামী দিনের, সংসার, সন্তানাদি নিয়ে। আমি নিজেকে খুব ভাগ্যবান মনে করি যে, তামান্না তাবাসুম এর মতো একটা সুন্দরী, বুদ্ধিমতি মেয়ের সঙ্গে আমার ভবিষৎ সংসার হতে যাচ্ছে। 

এভাবে চলতে লাগলো বেশ কয়েক মাস। মাঝে মধ্যে আমরা আধুনিক প্রযুক্তির ফোর জি এর বদ্দৌলতে ভিডিও কল করে কথা বলি ও দেখি। খুব ভালো লাগে। ধন্যবাদ দেই এই সব প্রযুক্তি গুলোকে, যার সাহায্যে অসাধ্য সাধন করা সম্ভব হচ্ছে। এক সময় ছিলো যখন চিঠি ছাড়া আর কোন যোগাযোগের মাধ্যম ছিল না। সেই চিঠি আজ কেবই ইতিহাস মাত্র। তামান্না একদিন জানালো তাকে কোথাকার এক ছেলে পক্ষ দেখতে আসবে। কিন্তু সে কোন ভাবেই রাজি না। 

তামান্নার কথা শুলে আমার মনের মধ্যে কেমন যেনো হাতুরী পিটানো শুরু হয়ে গেলো। সে আমাকে 
শান্তনা  দিয়ে বললো-
-তুমি কোন চিন্তা করো না, ওরা দেখতে এলেই যে বিয়ে হয়ে যাবে এমনতো নায়। তাছাড়া আমি আমার সিন্ধান্তের কথা বাড়ীতে যানিয়ে দিয়েছি। আর যদি সে রকম কিছু কখনো হয় তবে তোমাকে জানাবো, তুমি এসে আমাকে ভাগিয়ে নিয়ে যেও। 

আমি নির্ভাবনায় থাকলাম। একদিন যায় দু’দিন যায়, তামান্নাকে আমি আর ফেইস বুকে, ফোনে, কোথাও পাইনা। আমি অস্থির হয়ে উঠতে লাগলাম। কিন্তু আমার যেনো করার কিছুই নেই। কারন তামান্নার অন্য কোন ফোন নাম্বার, বা ঠিকানা কোনটাই আমার জানা নেই। ওর ফোনে বারবার কল করেও না পেয়ে সব আশা ছেড়ে দিলাম। 

দিন যায়, মাস গড়িয়ে বৎসর যায়, তামান্নার কোন খোঁজ আর পাইনা। সে হারিয়ে যায় দমকা হাওয়ার মতো আমার জীবন থেকে। কি বা দরকার ছিলো আমার সঙ্গে তার ফেসবুকে যোগাযোগর। সেই সম্পর্ক যদি গড়ে না উঠতো তবে এত কষ্ঠকি পেতে হতো। 

কালের পরিক্রমায় আমি আবার একদিন রংপুর থেকে পাবনা যাচ্ছি, বাস একুই ভাবেই চলছে। বাস বগুড়া এসে থামতেই কয়েকজন যাত্রী নেমে গেলো, সেই সাথে কয়েকজন যাত্রী বাসে উঠলো। আগত যাত্রীদের মধ্যে একজনকে দেখে আমার দৃষ্টি তার দিকে আটকে গেলো। একি দেখছি আমি, এতো সেই তামান্না, আজ এত দিনপর। সে আমাকে হয়তো ফলো করেনি, সে আমার অপজিটের জোরা সিটে একটাতে বসলো, বাস চলতে লাগলো, তামান্না হঠাৎ দেখে ফেললো আমাকে আজ তার পাশের সিটটিতে দখল করে আছে অন্য জন। যেমন আমার পাশের সিটটিও আর ফাঁকা নেই, দখল করে নিয়েছে আমারই একজন। তামান্নার পাশের ভদ্রলোকটির সাথে তার আচার ও আন্তরিকতা দেখে আমার বুঝতে বাকী রইলো না, ভদ্রলোকটি তামান্নার কে।

আমি যেমন আমার পাশের দু’ চোখকে ফাঁকি দিয়ে দেখছিলাম তামান্নাকে, তামান্নাও তেমনি তার পাশের লোকটার চোখ ফাঁকি দিয়ে আমাকে দেখছে। বুকের ভিতর দুমড়ে মুচরে একাকার হয়ে যেতে লাগলো। তামান্না নিরুদ্দেশ হবার পিছনে তবে এই ভদ্রলোকটিই দায়ি।

মুখফুটে দু’জনার মধ্যে কোন কথা না হলেও দু’জনার চোখ দেখে দু’জন বুঝে যাচ্ছিলাম সব কথা। বিধাতার চির সত্যের কাছে আমরা গেরে গেছি। যথারিতি বাস চলতে চলতে এক জায়গায থেমে গেলো। উঠে দাড়ালো দু’জন। হেটে দরজার কাছের দিকে যাচ্ছে, আর তামান্না পিছনফিরে বারবার আমাকে দেখছে। মনে হলো সে কিছুতেই আমাকে ফেলে যেতে চায় না, কিন্তু চির সত্যের কাছে আমরা বন্ধি, বাধ্য হয়েই নেমে পড়লো তামান্না। বাস আবার চলতে লাগলো, আমি বাহিরের দিকে তাকিয়ে রইলাম। আস্তে আস্তে  দুরত্ব বেড়ে গিয়ে দৃষ্টি সিমানার বাহিরে চেলে গেলো সে। সেই সাথে আমার বুকের বামপাশটা চিরচিনিয়ে ব্যথা করতে লাগলো। মনে হলো আমি দুনিয়ার সবচেয়ে দুঃখি মানুষ।


“সমাপ্ত”

No comments:

Post a Comment

International