Jagrotobibek24

তথ্য, বিনোদন, সমাজ, বিজ্ঞান ও সাহিত্য সমৃদ্ধ একটি সুন্দর ব্লগ

Sponsored by: VINNOMATRA

GoRiseMe.com

Followers

Tuesday, 9 November 2021

আপনার পরিবারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি আপনার সন্তান হওয়া উচিত না

 আপনার পরিবারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি আপনার সন্তান হওয়া উচিত না।






.
ছোটবেলায় মাকে দেখতাম, মাছের মাথাটা সবসময় আব্বার প্লেটে দিতে। খুব ছোটবেলা থেকেই বুঝতাম যে তিনি এই পরিবারের প্রথম শ্রেণীর মানুষ। তিনি যখন ঘুমাতেন, তখন আমরা উচ্চস্বরে কথা বলতাম না। তার সিদ্ধান্ত পছন্দ না হলে, তার সঙ্গে উচ্চস্বরে কথা বলার সাহস কখনই তৈরি হয়নি। আবার দাদা-দাদী যখন বেড়াতে আসতেন, তখন মাকে দেখতাম আব্বার কিছু কিছু সুবিধা কমিয়ে দিতে। এটুকু ধারণা মা পরিষ্কার তৈরি করেছিলেন যে, সিনিয়ররা জুনিয়রদের চেয়ে অধিক শ্রদ্ধাভাজন এবং অধিক সুবিধা পাওয়ার অধিকার রাখেন। বাসায় সার্বক্ষণিক মায়ের সাহায্যকারী মানুষ থাকলেও ১০ বছর বয়স থেকেই নিজের কাপড় নিজেই ধুয়েছি, খাওয়ার পর নিজের প্লেট ধুয়ে রেখেছি। 😌 (এখনো কারো বাসায় গেলে অভ্যাস বসত প্লেট ধুয়ে ফেলি!)
আমার মায়ের কড়া নিষেধ ছিল যে সেই সাহায্যকারীকে আমরা কেউ কোন কাজ করতে বলতে পারবো না। সে শুধু মায়ের কথা ও তার দেয়া কাজ করবে!! নিজের প্রতিটি কাজ নিজেকেই করতে হতো।
এখন অবস্থা পাল্টেছে। যে কোন বাবা-মাকেই যদি জিজ্ঞাসা করা হয়, আপনার পরিবারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কে? তারা নিঃসন্দেহে বলবে, তাদের সন্তান। তাদের সন্তান সোনার টুকরা, হীরার টুকরা, প্লাটিনামের টুকরা। যদি প্রশ্ন করা হয়, কেন তারা এতটা গুরুত্বপূর্ণ, তারা এমন কি কাজ করেছে যে তারা এতটা গুরুত্বপূর্ণ। কেউ সদুত্তর দিতে পারবে না। তারা কোন কারণ ছাড়াই, কোন যোগ্যতা অর্জন ছাড়াই পরিবারের প্রথম শ্রেণীর সদস্য!! 😒
আমাদের সমস্যার জায়গা এখানেই। কোন অফিসে যদি এমডির পরিবর্তে জুনিয়র অফিসার বেশি গুরুত্ব পায়, তাহলে ঐ অফিসের শৃঙ্খলা ভেঙে পড়বে। যদি আর্মি জেনারেলের চেয়ে তার অধীনস্থ সৈন্যরা বেশি গুরুত্ব পায়। তাহলে ঐ আর্মি দিয়ে যুদ্ধ জয় সম্ভব না। আমাদের সন্তানরা জ্ঞান হওয়ার পর থেকেই বুঝতে পারে, তারা পরিবারের প্রথম শ্রেণীর সদস্য, তাদের সুযোগ সুবিধা দেখার জন্যই নিয়োগ দেওয়া হয়েছে তাদের বাবা-মাকে, যারা এই পরিবারের দ্বিতীয় শ্রেণির সদস্য। এবং তাদের নানা-নানী, দাদা-দাদীরা তৃতীয় শ্রেণির সদস্য!!
সন্তান যখন দেখবে, সে কোন যোগ্যতা অর্জন ছাড়াই এই পরিবারের প্রথম শ্রেণীর সদস্য, তখন সে এমনকি যোগ্যতা অর্জন করতেও চাইবে না। পরিবারে বাবা-মার অবস্থান সম্পর্কে, তাদের সুযোগ সুবিধা সম্পর্কে ভুল ধারণা তৈরি হবে। দাদা-দাদীর সঙ্গে, নানা-নানীর সঙ্গে কিভাবে কথা বলতে হয়, এগুলো শিখবে না। সমাজের বয়োজ্যেষ্ঠদের সঙ্গে কিভাবে কথা বলতে হয় শিখবে না, কারণ সে তো জন্মগতভাবে প্রথম শ্রেণীর সুবিধাভোগী ব্যক্তি। এখন মাঝে মাঝেই শোনা যায়, সন্তান মা-বাবার সঙ্গে জেদ করছে, তাকে কেন দামী মোবাইল ফোন কিনে দেওয়া হচ্ছে না, দামী ল্যাপটপ কিনে দেওয়া হচ্ছে না,..............................।
তারা এরকম করবে এটাই স্বাভাবিক, কারণ তারা এটা জেনে বা দেখে বড় হচ্ছে যে - তাদের সুবিধা দেওয়াই তাদের বাবা-মার দায়িত্ব। তারা কিভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করবে এটা তাদের ব্যাপার। বাবা-মা এখন আর চায় না যে তাদের সন্তান একজন দায়িত্বশীল নাগরিক হোক। বাবা-মা তাদের সন্তানদের তাদের সামাজিক অবস্থান সম্পর্কে কখনই জানান না, সামাজিক দায়বদ্ধতা সম্পর্কে কখনো কিছু বলেন না। শুধু বলেন, বেটা/মা তোকে বিসিএস ক্যাডার হতে হবে, ডাক্তার হতে হবে, ইন্জিনিয়ার হতে হবে।
কতজন বাবা-মা আছে যে তাদের সন্তানদের বলে, বাবা/মা তোরা ভালো মানুষ হ?? সামাজিক দায়িত্ববোধ শূন্য, সামাজিক সম্পর্ক শূন্য এইসব ছেলেমেয়েরা সমাজকে, আমাদের সংস্কৃতিকে কিভাবে উপরে তুলবে?? এরা বরং যে কোন সময় সুবিধাজনক প্লাটফর্মে নিজেদেরকে শোষিত হতে দিতে অহংকার করবে। কোনটা লজ্জাবোধের বিষয়, কোনটা অহংকারের বিষয় - পার্থক্য তৈরি করতে পারবে না।
বাবা-মার প্রাথমিক দায়িত্ব সন্তানকে বিশাল চাকুরীজীবি বানানো না। বাবা-মার প্রাথমিক দায়িত্ব সন্তানকে একজন দায়িত্বশীল, বিবেকবান, সহানুভূতিশীল নাগরিক হিসাবে গড়ে তোলা। ছেলে মেয়ে নির্বিশেষে জীবন দক্ষতা (life skill) শেখানো যেন নিজের কাজ নিজে করতে পারে!!
.


Mokhter Ahma এর ফেসবুক থেকে
অনুবাদ

No comments:

Post a Comment

International