ইসলাম বিকৃত হবার আগ পর্যন্ত মুসলমানদের ধর্মীয়, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামরিক ইত্যাদি সকল কার্যক্রমের কেন্দ্রবিন্দু ছিল মসজিদ। কেন্দ্রীয় মসজিদ ছিল কেন্দ্রীয় কার্যালয়, স্থানীয় মসজিদ ছিল স্থানীয় কার্যালয়। কেন্দ্রীয় মসজিদের ইমাম ছিলেন জাতির প্রধান ইমাম বা রাষ্ট্রনায়ক। আর স্থানীয় মসজিদের ইমাম ছিলেন আঞ্চলিক শাসক, আরবিতে যাকে বলা হতো আমির (আদেশদাতা, কমান্ডার)।
যে কোনো এলাকায় যে কোনো ব্যক্তি, পরিবার, বা গোষ্ঠী বিপদে পড়লে এখন ছুটে যায় কোথায়? মেম্বারের কাছে, চেয়ারম্যানের কাছে, থানার ওসির কাছে, মেয়রের কাছে। তখন ছুটে যেত মসজিদে, ইমামের কাছে ও আমিরের কাছে। মসজিদ কেবল নামাজ পড়বার জায়গা ছিল না। নামাজের সময়টুকুতে নামাজ, এর বাইরে পুরো সময়ই মসজিদ মুখরিত থাকত সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, শিক্ষা, প্রশিক্ষণ, পরিকল্পনা, প্রস্তাবনা, আলোচনা, সংলাপ ইত্যাদি কাজে। সব ধরনের কাজ সেখানে হত বিধায় সব ধরনের মানুষের প্রবেশাধিকার ছিল। ছিল না নিষেধাজ্ঞার বাড়াবাড়ি। নারীরা যেতে পারত, শিশুরা যেতে পারত, অমুসলিমরা যেতে পারত, নিন্দুকরাও যেতে পারত। কারণ, সবাই মিলেই জাতি। সমস্যা সবারই থাকতে পারে। জনগণ সঙ্কটে জর্জরিত হয়ে আর্তনাদ করবে, আর তাদের শাসক মসজিদে বসে আল্লাহর জিকির করবে- এমনটা কেউ ভাবতেও পারত না। ইমামের প্রধান ইবাদত ছিল জনগণের সমস্যার সমাধান করা।
কিন্তু এখন ১৪০০ বছর পর আমরা দেখতে পাচ্ছি অদ্ভূত চিত্র। দেখতে পাচ্ছি মসজিদের দরজায় বড় করে লেখা আছে মসজিদ থেকে পানি নেওয়া নিষেধ। মসজিদ থেকে সাধারণত পানি নেয় কারা তা আমরা সবাই জানি। ফ্ল্যাট বাড়িতে বসবাস করা স্বচ্ছল পরিবারের লোকজন মসজিদে পানি নিতে আসে না। যেসব নিম্ন আয়ের মানুষ অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বসবাস করে এবং বিশুদ্ধ পানির সঙ্কটে ভুগে তারাই সাধারণত মসজিদে পানি নিতে আসে। এই মানুষগুলোর শুধু বিশুদ্ধ পানি নয়, খাদ্যের নিশ্চয়তাও পাওয়ার কথা ছিল মসজিদ থেকে। কারণ, ধারণাগতভাবে মসজিদই মুসলিমদের সঙ্কট সমাধানের জায়গা, আশ্রয়স্থল। সেই মসজিদে নিষেধাজ্ঞার তালা ঝুলিয়ে দিয়ে আমরা যারা নিশ্চিন্ত মনে নামাজ পড়ছি আর আল্লাহকে ডেকে যাচ্ছি, আমাদের ডাক কি আল্লাহ শুনবেন? নাকি পানির কষ্টে ছটফট করা অসহায় মানুষের আর্তনাদ শুনবেন? আমাদের জান্নাত পাওয়া আকুতি আল্লাহর আরশে আগে পৌঁছবে, নাকি পিপাসার্ত মানুষের যন্ত্রণা লাঘবের আকুতি আল্লাহর আরশে আগে পৌঁছবে?
ধিক্কার জানাই এমন মসজিদ কমিটিকে
Collected
No comments:
Post a Comment